ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সব দল নয়, ডিসেম্বরে নির্বাচন শুধু একটি দলই চায়: প্রধান উপদেষ্টা

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : May 30, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল: টোকিওতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল নয়, বরং কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট দলই ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচন চায়—এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে), জাপানের রাজধানী টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে আয়োজিত ‘ফিউচার অব এশিয়া’ শীর্ষক ৩০তম নিক্কেই ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, “আমার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। আমার লক্ষ্য একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। মানুষের ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষায় এবং গণতন্ত্রের মসৃণ রূপান্তরের লক্ষ্যে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

তিনি জানান, সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন—এই তিনটি দায়িত্ব পালন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে কি না, তা নির্ভর করছে কতটুকু সংস্কার সম্পন্ন হয় তার ওপর। সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় বিবেচনা করছে। “তাড়াহুড়ো করে নির্বাচন না করে যথাযথ সংস্কার করে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে চাই,”—বলেন তিনি।

ড. ইউনূস আরও বলেন, “আমরা এখন এক অস্থির ও অনিশ্চিত সময় পার করছি। বিশ্বজুড়ে শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে, পারস্পরিক সহযোগিতা হ্রাস পাচ্ছে। ইউক্রেন, গাজা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চলমান সংঘাত লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস করছে।”

তিনি মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পরিণতিকে ‘গভীর মানবিক সংকট’ হিসেবে বর্ণনা করেন। পাশাপাশি, প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে সংঘটিত সংক্ষিপ্ত কিন্তু ব্যয়বহুল যুদ্ধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যুদ্ধে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে।”

এসময় তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য সংশ্লিষ্ট নেতাদের ধন্যবাদ জানান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, সহাবস্থান ও স্থিতিশীলতার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ড. ইউনূস বলেন, বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ বৃদ্ধি পাওয়ায় মুক্ত বাজার অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং আর্থিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সাম্প্রতিক সামাজিক বিভাজন জনসন্তোষ ও অস্থিরতা তৈরি করেছে, যা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের দিকে নিয়ে গেছে।

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যেও, বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ ও ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বৈশ্বিক শান্তি ও মানবিকতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, “বিশ্বের অর্ধেক মানুষ এশিয়ায় বসবাস করে—এ অঞ্চল এখন যেমন অনিশ্চয়তার কেন্দ্র, তেমনি সম্ভাবনারও কেন্দ্র। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এশিয়া শান্তি, সংলাপ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের নতুন পথ দেখাতে পারে।”

শেষে তিনি বলেন, “এশিয়ার ভবিষ্যৎ শুধুই অর্থনীতি বা ভূরাজনীতির বিষয় নয়, এটি মানুষের চিন্তা, সাহস ও সহযোগিতার ওপর নির্ভর করে। আমাদের উচিত ভয় নয়, আশার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ ও জাপান একসঙ্গে কাজ করে শুধু এশিয়ার নয়, গোটা বিশ্বের ভবিষ্যৎ পুনর্লিখন করতে পারে।”


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স