নতুন বাজেটের প্রাক্কালে মূল্যস্ফীতি কাগজে-কলমে কমছে, কিন্তু বাস্তবে স্বস্তির দেখা মিলছে না সাধারণ মানুষের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে, আয় তার ধারেকাছেও নেই। মজুরি বাড়ছে না, কর্মসংস্থানেও নেই ইতিবাচক অগ্রগতি। অভ্যন্তরীণ আয়ও পড়েছে চাপে, ঋণ পরিশোধের বোঝা আরও ভারী। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নেই গতিশীলতা— সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে চলছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।
এই বাস্তবতায় সামনে এসেছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। সম্ভাব্য আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ঘাটতি থাকবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা— যা জিডিপির ৪ শতাংশের কিছু বেশি। উন্নয়ন খাতে (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় কম।
মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ এখন বেশি নির্ভর করছে পাইকারি বাজার যেমন কারওয়ান বাজারের ওপর, যেখানে কিছুটা কম দামে পণ্য মেলে। তবে বাস্তবে আয়ের তুলনায় পণ্যের দাম এখনও অনেক বেশি। সরকারি পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে বলে দাবি করা হলেও, বাস্তবে তেমন কোনো স্বস্তি নেই।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “খাদ্যের দামে কিছুটা স্বস্তি মিললেও অন্যান্য খরচ তো কেউ কমায়নি।” বাজেটের মূল দর্শন এবার “সমতাভিত্তিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র” গঠনের দিকে।
অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “অপচয় কমিয়ে বাস্তবভিত্তিক ও উৎপাদনমুখী খাতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নতি করাও এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও বলেন, “করদাতারা যে অর্থ দেন, তা যদি রাজস্ব কোষাগারে পুরোপুরি জমা হয়, তাহলে জনগণের ওপর চাপ অনেকটাই কমানো সম্ভব।”
বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনার জন্য ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য প্রায় ৫.৫ লাখ কোটি টাকা। তবে বিনিয়োগ পরিস্থিতি এখনো দুর্বল। ড. জাহিদ হোসেনের মতে, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে না গেলে অর্থনীতি স্থিতিশীল করা কঠিন হবে।
এই বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ্য ভাতার ঘোষণা আসছে বলে জানা গেছে। সোমবার (৩ জুন) বিকেল ৪টায় বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।