শাংরি-লা সংলাপে মুখোমুখি অবস্থানে ভারত-পাকিস্তান সামরিক নেতৃত্ব, কাশ্মির ও সন্ত্রাস নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলন শাংরি-লা সংলাপে মুখোমুখি অবস্থানে দেখা গেল ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের। ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান এবং পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা আলোচনায় অংশ নিয়ে একে অপরকে কৌশলগত বার্তা দেন। খবর, হিন্দুস্তান টাইমস-এর।
সংলাপের এক সেশনে উভয় প্রতিনিধি আঞ্চলিক সংকট ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরক্ষা উদ্ভাবনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
সেখানে জেনারেল চৌহান বলেন, “ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি নতুন রাজনৈতিক সীমারেখা টেনে দিয়েছে। ‘অপারেশন সিন্দুর’ সেই অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এটি প্রতিপক্ষের জন্য একটি শিক্ষা হওয়া উচিত— ভারত আর সন্ত্রাস সহ্য করবে না।”
তিনি আরও দাবি করেন, “দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তান থেকে পরিচালিত ছায়াযুদ্ধে বহু ভারতীয় প্রাণ হারিয়েছে। আমরা এখন এর শেষ দেখতে চাই।”
সম্প্রতি কাশ্মিরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ভারত অভিযোগ করেছে, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর হাত রয়েছে এর পেছনে। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
পাল্টা বক্তব্যে জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা বলেন, “সংকট ব্যবস্থাপনার বদলে এখন সময় বিরোধ নিষ্পত্তির পথে হাঁটার। তবেই টেকসই শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।” তিনি আরও বলেন, “কাশ্মির সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে— জাতিসংঘের প্রস্তাব ও কাশ্মিরি জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী।”
ভারতের বর্তমান নীতিকে দায়ী করে মির্জা বলেন, “এই নীতির কারণে সংকট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি কার্যকর হচ্ছে না। ফলে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকছে না, এবং পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি কাশ্মির প্রসঙ্গে আরও বলেন, “যখন সংকট নেই, তখন আলোচনাও নেই। অথচ কাশ্মিরই ভারত-পাকিস্তান বিরোধের মূল ইস্যু।”
পাকিস্তানি জেনারেল সতর্ক করে বলেন, “যদি বিরোধ নিষ্পত্তির পথে না যাওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতেও নতুন সংকট সৃষ্টি হবে এবং পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে— সীমান্ত ও অভ্যন্তরীন উভয় ক্ষেত্রেই।”
তিনি পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, “ভারতকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যার ফলে তারা সংঘর্ষ ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী নয় এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারে মনোযোগী।”
প্রসঙ্গত, ৩১ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত আয়োজিত এই সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষ সামরিক ও কৌশলগত বিশ্লেষকরা অংশগ্রহণ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ ও কাশ্মির ইস্যু ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। উভয় দেশের প্রতিনিধি নিজেদের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরেন এবং পরস্পরের নীতিকে সরাসরি না হলেও স্পষ্ট বার্তায় চ্যালেঞ্জ জানান।