থ্রিলার সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক ফ্রেডেরিক ফরসাইথ আর নেই। ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকাল’-এর মতো বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাসের স্রষ্টা এই জনপ্রিয় ব্রিটিশ লেখক ৮৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার এজেন্ট জোনাথন লয়েড এই দুঃসংবাদটি নিশ্চিত করেছেন।
এক বিবৃতিতে জোনাথন লয়েড বলেন, “আমরা বিশ্বের অন্যতম সেরা থ্রিলার লেখককে হারালাম।”
ফরসাইথ তার লেখনীতে যেমন ছিলেন বাস্তবভিত্তিক, তেমনই ছিলেন কল্পনার জাদুকর। তিনি ‘দ্য ওডেসা ফাইল’, ‘দ্য ডগস অব ওয়ার’-সহ ২৫টিরও বেশি থ্রিলার লিখেছেন, যেগুলোর বিশ্বজুড়ে বিক্রি হয়েছে ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি কপি।
তার প্রকাশক বিল স্কট-কের বলেন, “ফ্রেডের লেখা গল্পগুলো আজও পাঠকের হৃদয়ে অমলিন। তিনি থ্রিলার ধারাটিকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছেন। তার কাজ সমসাময়িক বহু লেখকের জন্য অনুপ্রেরণা।”
১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডের কেন্টে জন্ম নেওয়া ফরসাইথ মাত্র ১৮ বছর বয়সে রয়্যাল এয়ার ফোর্সে (RAF) যোগ দেন। পরে তিনি হয়ে ওঠেন বিখ্যাত সাংবাদিক—বিবিসি এবং রয়টার্সের হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রিপোর্ট করতেন।
২০১৫ সালে ফরসাইথ প্রকাশ করেন যে, তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬-এর হয়ে ২০ বছরেরও বেশি সময় গোপনে কাজ করেছেন। তার অনেক উপন্যাসের পটভূমি এসেছে এসব বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই।
ব্যক্তিগত জীবনের কঠিন সময়েই লেখা হয় তার প্রথম এবং সবচেয়ে আলোচিত থ্রিলার ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকাল’ (১৯৭১)। তিনি বলেছিলেন, “সেই সময় আমার হাতে কিছুই ছিল না—না অর্থ, না বাসস্থান, না যানবাহন। ভেবেছিলাম, কীভাবে এই দুরবস্থা থেকে বের হব? তখনই মাথায় আসে—একটি উপন্যাস লিখি।”
এই উপন্যাসের গল্প ১৯৬৩ সালের প্রেক্ষাপটে, যেখানে একজন ইংরেজ ভাড়াটে খুনিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্য গলকে হত্যার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এটি ১৯৭৩ সালে সিনেমায় রূপ নেয় এডওয়ার্ড ফক্সের মাধ্যমে এবং ২০২৩ সালে এডি রেডমেইনের অভিনয়ে নির্মিত হয় টিভি নাটক।
জোনাথন লয়েড আরও বলেন, “মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও আমি তার সঙ্গে বসে তার জীবনের ওপর নির্মিত একটি নতুন তথ্যচিত্র দেখছিলাম। তার জীবন ও অভিজ্ঞতা আমাকে পুনরায় মুগ্ধ করেছে।”
প্রকাশক স্কট-কের বলেন, “তার সঙ্গে কাজ করা ছিল আমার পেশাগত জীবনের এক দারুণ অভিজ্ঞতা। সাংবাদিকতা তাকে শৃঙ্খলাপূর্ণ আর সময়নিষ্ঠ করেছিল। তার গল্প বলার দক্ষতা ছিল দুর্দান্ত।”
ফরসাইথের বন্ধু ও গায়িকা এলেইন পেজ এক টুইটে গভীর শোক প্রকাশ করেন। আর বিখ্যাত কম্পোজার অ্যান্ড্রু লয়েড ওয়েবার বলেন, “ফ্যান্টম অব দ্য অপেরা’র সিক্যুয়েল ‘লাভ নেভার ডাইজ’-এ আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। তিনি ফ্যান্টম চরিত্রের রহস্য আর রোমান্স গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন। ধন্যবাদ, ফ্রেডেরিক—তোমার গল্পগুলো চিরকাল বেঁচে থাকবে।”