ঠাকুরগাঁওয়ে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রী জুলি নিহত, বন্ধু আটক
পঞ্চগড়: ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া ইউনিয়নে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার কলেজ শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম জুলি (২৩) নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জুলির বন্ধু মাহাদী হাসান জয়কে (২৯) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
যেভাবে ঘটলো দুর্ঘটনা
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে জুলি তার বান্ধবী অসুস্থ মাকে দেখতে ঠাকুরগাঁও যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। তার বন্ধু মাহাদী হাসান জয়ের মোটরসাইকেলে করে পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের ঘনিবিষ্ণুপুর এলাকায় আটোয়ারী-রুহিয়া আঞ্চলিক সড়কে একটি ট্রাক্টরকে পাশ কাটাতে গিয়ে জুলি মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এসময় ট্রাক্টরের চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে গেলে ঘটনাস্থলেই তিনি গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উম্মে কুলসুম জুলিকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ সুরতহাল করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
নিহত ও আটক ব্যক্তির পরিচয়
নিহত উম্মে কুলসুম জুলি পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের জোতহাসনা এলাকার জহিরুল ইসলামের মেয়ে। তিনি পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্সে পড়াশোনা করতেন। পাশাপাশি, তিনি অনলাইনে একটি মাদ্রাসা থেকে আলেমা পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা ও আউটসোর্সিংয়ের কাজও করতেন বলে জানা গেছে।
আটক হওয়া মাহাদী হাসান জয় সদর উপজেলার পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের জগদল এলাকার জিহাদ হোসেনের ছেলে। তিনি জগদল বাজারে একটি তিনতলা ভবনে হাফেজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা করেন।
পরিবারের অভিযোগ ও জয়ের দাবি
জুলির চাচাতো চাচা সামিউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেছেন, "আমার ভাতিজীকে হত্যা করা হয়েছে। একটা সুস্থ মানুষ কি মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়? আর ছেলেটা রুহিয়া থেকে আসতেই তিনবার পোশাক পরিবর্তন করেছে। তাকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। অবশ্যই আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।"
তবে, আটক হওয়া মাহাদী হাসান জয় বলেন, "জুলি ও তার পরিবারের সাথে আমার আগে থেকে ভালো পরিচয়। আজকে সে ঠাকুরগাঁয়ে যাবে এটি আমাকে আগেই ম্যাসেঞ্জারে জানায়। পরে মঙ্গলবার সকালে আমরা বের হই। রুহিয়াতে গিয়ে সে মাথা ঘুরে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায়। এসময় একটি ট্রাক্টর তাকে চাপা দেয়। আমি স্থানীয়দের কাছে একটি অ্যাম্বুলেন্স চাই তাকে পঞ্চগড় দ্রুত নিয়ে আসার জন্য। এখানে নিয়ে আসার পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।"
পুলিশের বক্তব্য
রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং একজন মহিলাকে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তারা প্রথমে মনে করেছিলেন তারা স্বামী-স্ত্রী। জয় অ্যাম্বুলেন্স চাইলে তারা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন।
রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম নাজমুল কাদের বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাননি এবং পরে জানতে পারেন অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতকে পঞ্চগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, নিহতের পরিবার কোনো অভিযোগ দায়ের করলে তারা আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) মূলে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। তবে নিহতের পরিবার কোনো মামলা দায়ের করতে চাইলে যেহেতু রুহিয়া ঘটনাস্থল, সেখানেই সংশ্লিষ্ট থানাতে তারা মামলা করবেন।