সরকারের সব কাজের দায় একা আইন উপদেষ্টার নয়: সমালোচকদের প্রতি আসিফ নজরুলের ক্ষোভ
ঢাকা: সরকারের যেকোনো কাজের দায়ভার পুরো সরকারের, অথচ অনেকেই নির্দিষ্টভাবে শুধু আইন উপদেষ্টাকেই দায়ী করছেন— এমন মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি নানা সমালোচনার মুখে পড়ছেন। তবে, নেটিজেন বা সমালোচকদের সমালোচনার সঙ্গে সরকারের ভালো কাজের প্রশংসার বেলায় তিনি উপেক্ষিত থাকেন বলেও মনে করেন।
বুধবার (১১ জুন) রাত ১১টা ২২ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
আইনের কারিগরি দিক ও ভুল বোঝাবুঝি
ড. আসিফ নজরুল তার পোস্টের প্রথম অংশে লেখেন, সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায়ন বিষয়ক ভুল সংবাদের জেরে সমালোচনার ঝড় ওঠে, যার অন্যতম শিকার হয় তার পরিবারের সদস্যরা। অনেকেই তাকে এই আইন তৈরির জন্য দায়ী করেন, যদিও এটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় করেছে। সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি সবিনয়ে বলেন, "অন্য যে কোনো মন্ত্রণালয় যে অধ্যাদেশই করুক না কেন, তা জারি করতে হয় আইন মন্ত্রণালয়কে। আমাদের রুলস্ অব বিজনেস অনুসারে এটাই বিধান।" তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এনবিআর বা সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা বিষয়ক আইনগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তৈরি করলেও, আইন মন্ত্রণালয়কেই তা জারি করতে হয়, এবং গেজেটের প্রথম পাতায় আইন মন্ত্রণালয়ের নাম থাকে। তবে এর অর্থ এই নয় যে আইন মন্ত্রণালয় আইনগুলো তৈরি করেছে বা এর প্রশাসনিক দায়িত্বে আছে।
তিনি স্পষ্ট করেন, আইন মন্ত্রণালয় কেবল নিজস্ব কার্যপরিধিভুক্ত বিষয়েই আইন প্রণয়ন করে, যেমন দেওয়ানি কার্যবিধির সংশোধনী বা উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত আইন। অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধিভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয়ের নেই, কেবল জারি করার দায়িত্বই তার। এটি নিছক আনুষ্ঠানিকতা।
সমালোচনার দ্বৈত মানদণ্ড ও দায়ভার
পোস্টের দ্বিতীয় অংশে আইন উপদেষ্টা লেখেন, আইন একটি খটমটে বিষয় হলেও, সাদামাটা ও সহজবোধ্য যেকোনো বিষয়েও তাকে নিন্দা করার প্রবণতা সমাজের কিছু মানুষের মধ্যে দেখা যায়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "সরকারের যেকোনো কাজের সমালোচনা যদি আমাকে করা হয়, তাহলে যেকোনো ভালো কাজের প্রশংসাও আমাকে কেন করা হয় না?"
তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি কীভাবে বিদেশে গেলেন—এই দায় যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে তাকে দেওয়া হয়, তাহলে দ্রব্যমূল্য স্থির থাকার প্রশংসাও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে তাকেই দিতে হবে। তবে তিনি মনে করেন, এর কোনটিই আসলে করা ঠিক নয়।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, "আমার কাজের জন্য নিন্দা/প্রশংসা আমাকে করবেন, অন্যের কাজের জন্য অন্যকে। যেকোনো কাজের সামগ্রিক দায়দায়িত্ব আমাদের গোটা সরকারের। কিন্তু যদি নির্দিষ্টভাবে একজন উপদেষ্টাকে দায়ী করা হয় তাহলে সেটি শুধু তার মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত বিষয়ে করা উচিত।"
ব্যক্তিগত আবেদন ও নৈতিক বার্তা
পোস্টের শেষ অংশে ড. আসিফ নজরুল লেখেন, যারা নিন্দা করেন বা কুৎসা রটান, তারা হয়তো এতে কোনো আনন্দ খুঁজে পান। কিন্তু এটি অন্য কাউকে এমন কষ্ট দিতে পারে, যা তারা নিজে কখনও বহন করতে চাইবেন না। তিনি এটি মনে রাখতে বলেন।
পোস্টের একেবারে শেষে তিনি যোগ করেন, "আমি জানি ‘অপরের মুখ ম্লান ক’রে দেওয়া ছাড়া প্রিয় সাধ নেই’- এমন মানুষ আছে সমাজে। যারা এমন না, তাদের কাছে অনুরোধ, কারও নিন্দা করার আগে একটু জেনে নিন। আল্লাহ আছেন, আমাদের সবাইকে একদিন জবাব দিতে হবে।" এই কথাটি লিখে তিনি তার পোস্টের ইতি টানেন।