ইসরায়েলি তাণ্ডবেও অক্ষত ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা: ফোর্দো কেন্দ্র সচল থাকায় তেল আবিবের মিশন ব্যর্থ
তেহরান/জেরুজালেম, ১৫ জুন: ইরানের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা সত্ত্বেও দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দাবি করছে। তাদের তথ্যমতে, ইরানের প্রধান নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনার কিছুটা ক্ষতি হলেও দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রের কর্মসূচি অক্ষত এবং সচল রয়েছে। এর ফলে ইসরায়েলের হামলার যে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, অর্থাৎ ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করা, সেই মিশনে তেল আবিব সফল হয়নি।
ইসরায়েলি হামলা ও দাবি
'অপারেশন রাইজিং লায়ন' শুরুর পর ইসরায়েল প্রথমে ইরানের প্রধান পারমাণবিক কেন্দ্র নাতাঞ্জে হামলা চালায়। এরপর আঘাত হানা হয় ফোর্দো নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টেও। তেল আবিবের দাবি ছিল, এই হামলায় ইরান তার পারমাণবিক সক্ষমতা হারাবে। নেতানিয়াহু প্রশাসন জানিয়েছে, হামলার কারণে নাতাঞ্জে তেজস্ক্রিয় দূষণ দেখা দিয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানের ইসফাহান প্রদেশে অবস্থিত এই নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাটির ভূগর্ভে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কাজে ব্যবহৃত হাজার হাজার সেন্ট্রিফিউজ মেশিন রয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকদের ভিন্ন মত
তবে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত এই ভয়াবহ হামলার পরও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ভিন্ন কথা বলছে। তাদের দাবি, তেল আবিবের ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলায় তেহরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর কেবল অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি সারিয়ে নিতে পারলে ইরান আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প চালিয়ে যেতে পারবে।
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ড্যানিয়েলা প্লেটকা মন্তব্য করেছেন, "ইসরায়েল কি ইরানের পরমাণু প্রকল্প পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে? উত্তর হলো না। তবে তারা এই প্রকল্পের কাজকে কিছু পিছিয়ে দিতে পারে। কারণ জ্ঞান কখনও ধ্বংস করা যায় না।"
দ্যা ইকোনোমিক টাইমস এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, নাতাঞ্জের কিছুটা ক্ষতি হলেও ইরানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রটির ক্ষতি করতে ইসরায়েল ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির কোম শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ভূগর্ভস্থ এই পারমাণবিক কেন্দ্রটির অবস্থান। স্থাপনাটিকে একসময় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হলেও পরে এটি দেশটির পরমাণু কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফোর্দোতে হামলা হলেও এর কয়েক স্তরের সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণেই তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। ফোর্দোকে অকেজো করতে প্রয়োজন 'ম্যাসিভ অর্ডিন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট বোম', যা 'মাদার অফ অল বোম' নামে পরিচিত। ইসরায়েলের কাছে এই বোমা না থাকায় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তেহরানের পারমাণবিক সক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস করতে তেল আবিবকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
অতীতের ঘটনাপ্রবাহ থেকেও দেখা যায়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির দীর্ঘমেয়াদি কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। ২০১০ সালে নাতাঞ্জে স্টাক্সনেট সাইবার অ্যাটাকে হাজার হাজার সেন্ট্রিফিউজ অকেজো হয়ে গিয়েছিল, তবে ইরান এত বড় সাইবার অ্যাটাকও মাত্র দুই বছরের মধ্যেই সামলে নিয়েছিল।