হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি: বিশ্ব জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা, ইসরায়েল কতটা প্রভাবিত হবে?
তেহরান/তেল আবিব, ১৬ জুন: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজেই চলছে, আর এর উত্তাপ এখন ছড়িয়ে পড়েছে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালীর ওপর। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, যার জেরে ইরান হুমকি দিয়েছে—প্রয়োজনে তারা হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে। যদি এটি সত্যি হয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সরবরাহে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে।
বিশ্ব জ্বালানির এক-পঞ্চমাংশ হরমুজ প্রণালী হয়ে যায়
বিশ্বের মোট জ্বালানি সরবরাহের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই হরমুজ প্রণালী হয়ে পরিবাহিত হয়। এটি মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস রপ্তানির অন্যতম প্রধান পথ। ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত সংকীর্ণ এই সমুদ্রপথ বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, যা সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আরব নিউজ-এর একটি বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিকল্প পথ থাকলেও হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় তেল উৎপাদক দেশগুলো ঝুঁকিতে পড়বে। যদিও সৌদি আরবের তেল উৎপাদন কেন্দ্র আবকাইক থেকে লোহিত সাগরের ইয়ানবু পর্যন্ত ৭০ লাখ ব্যারেল ক্ষমতার একটি বিকল্প পাইপলাইন রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও ১৫ লাখ ব্যারেল ক্ষমতার পাইপলাইনের মাধ্যমে ফুজাইরাহ বন্দরে তেল পাঠায়, যা হরমুজ প্রণালীর বাইরে অবস্থিত। তবে এসব বিকল্প পথ পুরো রপ্তানি কাভার করতে পারবে না, ফলে কিছুটা হলেও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে।
ইরানের পূর্বের হুমকি ও বিশেষজ্ঞদের মত
তবে, ইরান আগেও হরমুজ প্রণালী বন্ধের এমন হুমকি দিয়েছে, কিন্তু তারা পুরোপুরি তা বাস্তবায়ন করেনি। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার জবাবে ইরান প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছিল, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। কারণ, এই পথ দিয়েই ইরান নিজেও তেল রপ্তানি করে থাকে; প্রণালী বন্ধ করলে তাদের নিজেদের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান ড্রোন ও নৌযান ব্যবহার করে কিছু সময়ের জন্য এই রুটে নাশকতা ঘটাতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ সম্ভব নয়। ১৯৮০-র দশকের 'ট্যাঙ্কার যুদ্ধের' সময়ও হরমুজ প্রণালী পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সেসময় ৪৫০টিরও বেশি জাহাজে হামলা হলেও, প্রণালী দিয়ে তেল রপ্তানি অব্যাহত ছিল।
ইসরায়েলের ওপর সরাসরি প্রভাব নেই, ঝুঁকিতে এশিয়া-ইউরোপ
অন্যদিকে, ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষে হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলেও ইসরায়েলের কোনো সরাসরি ক্ষতি হবে না। কারণ দেশটির সব তেল আসে ভূমধ্যসাগর হয়ে। তারা আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, গ্যাবন ও নাইজেরিয়া থেকে তেল আমদানি করে। ফলে ইসরায়েলের জন্য হরমুজ প্রণালী বন্ধ কোনো সমস্যা নয়। বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়া, ইউরোপ ও অন্যান্য অঞ্চলের দেশগুলো।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করলে চীন ও রাশিয়ার মতো দেশের সমর্থন হারাতে পারে। কারণ, এই প্রণালীর ৭৬ শতাংশ তেল এশিয়ার বাজারে যায়। চীন ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও প্রণালী বন্ধ হোক, তা তারা কখনও চায় না।