ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন: আপাত ঐক্য হলেও সামনে নানা চ্যালেঞ্জ দেখছেন বিশ্লেষকরা
ঢাকা, ১৮ জুন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে একটি আপাত ঐক্য তৈরি হলেও, আদৌ সংকট কেটে গেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, সামনে জুলাই সনদ, তারেক রহমানের ফেরা, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল ঘোষণা এবং ভোটার তালিকা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। কিছু শক্তি নির্বাচন চায় না এবং আওয়ামী লীগও সক্রিয় হতে পারে বলে তাদের মত। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে না বলেও তারা মনে করেন।
অন্তর্বর্তী সরকার-বিএনপির ঐক্য: নির্বাচনের বিকল্প নেই
নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থানে ঐক্য হয়েছে তারেক-ইউনূসের লন্ডন বৈঠকে। যদিও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিচার ও সংস্কারে পর্যাপ্ত অগ্রগতির শর্ত ছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ঘোষিত টাইমলাইন অনুযায়ী নির্বাচনের বিকল্প আর নেই সরকারের কাছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, "ঘোষিত সময়ের পর নির্বাচন করার আর সময়ও নেই। নির্বাচনকে উপেক্ষা করা কিংবা নির্বাচন না করে পার হয়ে যাওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।"
দৈনিক মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, "এখন যেভাবে রাজনীতির চলমান প্রক্রিয়া চলছে, তাতে একটা পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন ধরে রাখতে হলে কিংবা রাখা সম্ভব হলে নির্বাচন হয়তো হয়ে যাবে। তবে, নির্বাচন বিরোধী শক্তিও রয়েছে।"
জুলাই সনদ, তারেক রহমান ও আইনশৃঙ্খলা: ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
মূলত, নির্বাচনের সময়সূচী নিয়ে আপাতত ঐক্য হলেও, বিশ্লেষকরা সামনের দিনগুলোতে নানা চ্যালেঞ্জ দেখছেন।
মতিউর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, "এই মুহূর্তে পরিস্থিতি শান্ত হলেও, সামনের দিনগুলোতে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে, জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে মোড় ঘুরতে পারে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন যদি ফেব্রুয়ারিতে হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন কখন রোডম্যাপ ঘোষণা করবে, অর্থাৎ তফসিল ঘোষণার যে সময়টা, সেই বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে। এছাড়াও তারেক রহমানের দেশে ফেরার একটি বিষয় রয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ যে বসে থাকবে, সেটি ভাবারও কোনো কারণ নেই।"
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন, "বিভিন্ন শক্তির স্বার্থের সংঘাত এবং বিভিন্ন শক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে চিন্তা, সেটি নিয়েও সংঘাত— এ সমস্ত সংঘাতের মধ্য দিয়ে মাঝেমধ্যে ঐক্য হবে, মাঝেমধ্যে দ্বন্দ্ব হবে, এগুলোর মধ্যে দিয়ে সামনের সময়গুলো যাবে বলে ধারণা করছি।"
জামায়াত-এনসিপি'র অসন্তোষ ও তরুণ ভোটার
বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াত ও এনসিপি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে অসন্তুষ্ট। তারা তরুণ ভোটার আরও বাড়াতে চায়। তবে এতে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে না।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, "কোনো দল যদি মনে করে, তরুণরা ভোটার হলে তাদের দলকে ভোট দেবে—এমন আশা করার কোনো কারণ নেই। তরুণরা কে কোথায় ভোট দেবে, সেটির কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই।"
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আছে। তবে তফসিল ঘোষণার পর সবাই নির্বাচনমুখী হলে এক্ষেত্রে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।