যুদ্ধের ডামাডোলে ইন্টারনেটে আশ্রয় খুঁজছে ইরানের 'জেনারেশন-জেড'
তেহরান, ১৯ জুন: ইসরায়েলের একের পর এক হামলায় ইরান যখন অনেকটাই থমকে গেছে, রাজধানী তেহরানের অনেক এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার তরুণরা কীভাবে সময় কাটাচ্ছে, তারা কি প্রতিবাদ করছে নাকি যুদ্ধের ডামাডোলে নিশ্চুপ রয়েছে—এই প্রশ্নগুলো সামনে এসেছে। এ বিষয়টি নিয়ে কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, ইরানের 'জেনারেশন-জেড' (Gen Z) এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তাদের নতুন আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে ইন্টারনেট বা সাইবার দুনিয়ায়।
তেহরানে ভয়াবহতা, তবুও ভিটেমাটি ছাড়ছেন না তরুণরা
তেহরানের বাসিন্দা, ২৪ বছর বয়সী মোমো, যিনি প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করছেন, বলেন, "চারপাশে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ জানে না কখন কী হবে।" তবুও তিনি তেহরান ছাড়েননি। তার ভাষ্য, "আমার জন্ম-বাড়ি সব এখানে। তাই এটা ছেড়ে কোথায় যাব? বাঁচলে এখানেই বাঁচব, মরলেও এখানেই।"
মোমো জানান, এমন পরিস্থিতিতে তরুণদের কিছু একটা আঁকড়ে ধরতে হবে। তাই তারা যতটা সম্ভব সাইবার ওয়ার্ল্ডে সময় পার করছে।
ডিসকর্ড ও হোয়াটসঅ্যাপে ভার্চুয়াল সংহতি
প্রশ্ন উঠছে, অনলাইনে তারা কী করছে? জানা গেছে, ইরানি তরুণদের অনেকেই এখন গেম খেলার গ্রুপ চ্যাট সাইট ডিসকর্ডে সময় কাটাচ্ছে। কোনো কোনো তরুণের ভাষ্য, এই ডিসকর্ড তাদের কাছে এখন ঘরের মতো হয়ে গেছে। আগে বেশিরভাগই গেম খেলার জন্য ব্যবহৃত হলেও, এখন অনেকে অন্যের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য এই মাধ্যম ব্যবহার করে। ডিসকর্ডে যারা নিয়মিত যোগাযোগ করেন, তাদের কেউ দু-একদিন না এলেই গ্রুপের অন্যদের মনে শঙ্কা ভর করে। তখন তারা খোঁজ নেওয়া শুরু করেন, হামলায় তাদের কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা। সবমিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি ইরানি তরুণ ডিসকর্ড ব্যবহার করে বলে জানা গেছে।
আবার অনেকে হোয়াটসঅ্যাপেও খুব সক্রিয়। গ্রুপ চ্যাটে বা ভিডিও কলে তারা একে অন্যের খোঁজ রাখছে। যদিও সম্প্রতি ইরান সরকার এই অ্যাপটির বিরুদ্ধে তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে এবং সবার ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। ইরান সরকারের সন্দেহ, এই অ্যাপের মাধ্যমে গোপন তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে।
ইরানি তরুণদের মতে, এই ডিসকর্ড বা হোয়াটসঅ্যাপ এখন তাদের জীবনের অংশ। এখানেই তারা বন্ধুদের জন্মদিন পালন করে, হামলায় কেউ মারা গেলে কান্না করে, আবার শত্রুদের ঘায়েল করার খবর এলে সমস্বরে চিৎকার করে আনন্দ করে।
শুধু অ্যাপকেন্দ্রিক জীবন নয়, ব্যতিক্রমী উদ্যোগও
তবে শুধু অ্যাপকেন্দ্রিক জীবনই যে সব তরুণ কাটাচ্ছে, তেমনও নয়। যুদ্ধকালীন গর্ভবতী নারীদের নানা ধরনের সেবা ও টিপস দিতে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করা হয়েছে। যেখানে যোগব্যায়ামের মাধ্যমে হবু মা'দের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যেমন—কীভাবে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হয় বা নার্ভ ঠান্ডা রাখতে হয়।
বলা যায়, বাতাসে যখন বারুদের গন্ধ, তখন ভার্চুয়ালি একে অন্যের কাঁধে হাত রাখছে ইরানের 'জেনারেশন-জেড'। দেশ মাতৃকার জন্য অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে না পারলেও তারা জানাচ্ছেন ডিজিটাল সংহতি।