শুরুতে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলছিল পাল্টাপাল্টি হামলা। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে পুরো পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, কীভাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হামলার জন্য রাজি করালেন?
টাইম ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড় অর্জন হচ্ছে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পৃক্ত করা।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, এই পরিকল্পনার সূচনা হয় গত ৪ ফেব্রুয়ারি, যখন নেতানিয়াহু হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে স্মরণ করিয়ে দেন, কীভাবে এক সময় ইরান তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। এরপর তিনি একটি স্লাইড উপস্থাপন করে দেখান, কীভাবে ইরান দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি ট্রাম্পকে বলেন, ‘আপনার মেয়াদে বিশ্বের বুকে পরমাণু শক্তিধর ইরানকে অনুমতি দেওয়া যাবে না।’
এই বক্তব্যে ট্রাম্প প্রভাবিত হলেও তৎক্ষণাৎ তিনি হামলার সিদ্ধান্ত নেননি। বরং কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে তার পুরনো বন্ধু ও ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফকে আলোচনার দায়িত্ব দেন।
নেতানিয়াহু তখন ৬০ দিনের সময়সীমা মেনে নেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর যখন ইরানের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়নি, তখন ট্রাম্পও বুঝে যান আলোচনার মাধ্যমে সমাধান অসম্ভব।
৩১ মে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপকরণ উৎপাদন করছে। এরপর ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে।
তাদের দাবি, ইরান শুধুমাত্র সময়ক্ষেপণ করছিল, মূল উদ্দেশ্য ছিল গোপনে পারমাণবিক বোমা তৈরির পর্যায়ে পৌঁছানো।
তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ দাবির সঙ্গে একমত ছিল না। মার্চ মাসে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড কংগ্রেসে বলেন, ‘ইরান এখনও বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
শেষ পর্যন্ত ৬০ দিনের সময়সীমা শেষে ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, তারা ইরানে হামলা চালাবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ায় এই সংঘাত দীর্ঘমেয়াদে গড়ানোর ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে।