জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন। তার দাবি, কারও বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলেও দুদকের ‘ক্লিয়ারেন্স’ নিতে হলে দিতে হয় ন্যূনতম ১ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি এসব অভিযোগ করেন। পোস্টের সঙ্গে তিনি তিনটি ভিডিও ক্লিপও প্রকাশ করেছেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. মাহমুদা আলম মিতুর কাছ থেকেও সম্প্রতি এ টাকা দাবি করা হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) আকতার এবং একজন উপপরিচালকের (ডিডি) পরিচয়ে এ দাবি করা হয়। মাহমুদাকে বলা হয়, ‘আপনি ডাক্তার, আপনার তো টাকার অভাব থাকার কথা না। এক লাখ টাকা দিন, ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।’
হাসনাতের দাবি, দুদকের ‘সর্বনিম্ন রেট’ এখন ১ লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকতার আবার ফোন দিয়ে সরাসরি জানতে চান, টাকা দেবেন কিনা। না দিলে ‘খবর’ করে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
তিনি আরও লেখেন, মাহমুদা মিতু রেড ক্রিসেন্টে ৫ আগস্টের পর যোগ দিয়েছেন। দুদক বর্তমানে আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতির তদন্ত করছে। কিন্তু সেসব সময়ের প্রকৃত দোষীদের বাদ দিয়ে এখনকার লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে। এতে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের আশঙ্কা রয়েছে। যারা কিছুই করেননি, তাদের কাছ থেকে যদি লাখ টাকা আদায় করা হয়, তাহলে প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে কত টাকা আদায় করা হয়েছে, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
হাসনাত অভিযোগ করেন, দুদকের এমন কর্মকাণ্ড নতুন নয়। শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধী দলের বহু নেতাকে হয়রানি করেছে দুদক, অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কোনো তদন্ত হয়নি। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তনের আশা করা হলেও, বাস্তবে দুদকের পুরোনো স্বভাবই বহাল রয়েছে। বরং এখন চা খাওয়ার অজুহাতে ১ লাখ টাকা করে ঘুষ দাবি করা শুরু করেছে তারা।
তিনি জানান, মাহমুদা মিতু সাহস করে পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করেছেন এবং ঘুষ দেননি। কিন্তু সাধারণ মানুষ কীভাবে এই ‘চা খাওয়ার বিল’ দিতে বাধ্য হচ্ছেন, তা কেউ জানে না।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাহমুদা মিতু বা আমার বিরুদ্ধেও যদি কোনো দুর্নীতির অভিযোগ থাকে, তা প্রকাশ করুন। আইনগত ব্যবস্থা নিন। কিন্তু নিরীহ মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি কেন? টাকা না দিলে হুমকি কেন? আমরা ফ্যাসিবাদের পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। কিন্তু দুদক পুরোনো পথেই হাঁটছে। আমলাতন্ত্র আবার বিষদাঁত বের করেছে। এই বিষদাঁত ভেঙে না দিলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হবে।”
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আমলাদের এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাই মাসে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?” তিনি দুদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।