গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি হলেও দেশটির মূল পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস হয়নি এবং এতে মাত্র কয়েক মাসের জন্য ইরানের অগ্রগতি থমকে গেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) এই মূল্যায়ন করেছে বলে জানিয়েছে সাতটি আলাদা সূত্র।
সূত্র জানায়, এই প্রতিবেদনটি ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের যুদ্ধক্ষয় ক্ষতি মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যদিও এখনো পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত মূল্যায়ন শেষ হয়নি এবং নতুন তথ্য আসলে এতে পরিবর্তন আসতে পারে।
তবে ডিআইএ-এর এই প্রতিবেদন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি থেকে আলাদা। ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সুবিধা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথও দাবি করেছেন, ইরানের পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষা একেবারে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
ডিআইএ-এর মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ ধ্বংস হয়নি এবং বেশিরভাগ সেন্ট্রিফিউজ এখনো অক্ষত আছে। এছাড়া, হামলার আগেই ইরান তাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরমাণু সুবিধা সরিয়ে নিয়েছিল।
হোয়াইট হাউস এই মূল্যায়নের অস্তিত্ব স্বীকার করলেও এতে একমত নয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেরোলাইন লেভিট বলেছেন, এই প্রতিবেদন সম্পূর্ণ ভুল এবং এটি ‘টপ সিক্রেট’ ছিল, যা ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মিশনে অংশ নেওয়া ফাইটার পাইলটদের অবমূল্যায়নের চেষ্টা করা হয়েছে।
মার্কিন সেনাবাহিনী অবশ্য বলছে, অপারেশন পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে এবং এটি ছিল ‘অপ্রতিরোধ্য সাফল্য’।
উল্লেখ্য, মার্কিন হামলার আগে ইসরায়েলও ইরানের বিভিন্ন পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। তবে তারা দাবি করেছিল, এসব স্থাপনা ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের বাঙ্কার বাস্টার বোমার প্রয়োজন।
সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমান থেকে ফোর্দো, নাতানজ ও ইসফাহানে বোমা ফেলার পরও সেখানকার অধিকাংশ সেন্ট্রিফিউজ এবং উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ধ্বংস হয়নি। ক্ষয়ক্ষতি মূলত ভূমির উপরের বিদ্যুৎ অবকাঠামো এবং ইউরেনিয়াম ধাতুতে পরিণত করার সুবিধার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, ফোর্দোতে প্রত্যাশার তুলনায় কম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে তারা দাবি করেছে, সম্মিলিত হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি দুই বছর পিছিয়ে গেছে। যদিও এর জন্য ইরানকে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই পুনর্গঠন করতে হবে, যা ইসরায়েল মানতে নারাজ।
অন্যদিকে, মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের কিছু গোপন ভূগর্ভস্থ পরমাণু সুবিধা রয়ে গেছে, যা হামলার লক্ষ্য ছিল না এবং সেগুলো এখনো সক্রিয়।
এই হামলার পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়নের জন্য হাউস ও সিনেটের জন্য নির্ধারিত গোপন ব্রিফিং মঙ্গলবার বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে কবে ব্রিফিং হবে, তা নিশ্চিত করা হয়নি।
এদিকে, অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জেফরি লুইসও স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে বলেছেন, হামলার পরও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি এবং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি প্যাট রায়ান এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন হামলার প্রকৃত তথ্য গোপন করছে।
সবশেষে, ট্রাম্প এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ হামলাকে ‘সম্পূর্ণ সাফল্য’ দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ভিন্ন মূল্যায়নে উঠে এসেছে, ইরানের পরমাণু সক্ষমতা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি।