ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের জ্বালানি তেল আমদানিতে। ১২ জুন রাত তিনটার দিকে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর একদিন পরই মালয়েশিয়া থেকে ৩৪ হাজার ৬১৭ টন ডিজেল নিয়ে যাত্রা শুরু করে একটি জাহাজ। ওই জাহাজটি ১৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় শুধু এই একটি জাহাজেই সরকারের বাড়তি খরচ হয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তারা সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা 'প্ল্যাটস'-এর নির্ধারিত দরে তেল কেনে। বিপিসির নিয়ম অনুযায়ী, কোনো জাহাজে তেল লোডের আগের দুই দিন, লোডিংয়ের দিন এবং পরের দুই দিনের মোট পাঁচ দিনের গড় দামে তেলের মূল্য পরিশোধ করা হয়।
১৩ জুন ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন সরবরাহকৃত ডিজেলবাহী ওই জাহাজে তেল লোড করা হয়। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, লোডিংয়ের দিন থেকেই ডিজেলের দাম বেড়েছে। প্ল্যাটসের হিসেবে, ১১ জুন প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ৭৯.২৪ ডলার, ১২ জুন বেড়ে দাঁড়ায় ৮১.৩৭ ডলার। আর ১৩ জুন এক লাফে তা ৮৫ ডলারে পৌঁছায়। এরপর ১৬ জুন ৮৬.৭৮ ডলার এবং ১৭ জুন ৮৬.৭৯ ডলারে ওঠে।
পাঁচ দিনের গড় দামে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম পড়ে ৮৩.৮৪ ডলার। সেই হিসাবে ৩৪ হাজার ৬১৭ টন বা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৯ ব্যারেল ডিজেলের মোট মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা। অথচ, যুদ্ধ শুরুর আগে ৭ জুন যে জাহাজে ডিজেল এসেছিল, সেক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেল দাম ছিল ৭৬.৬৯ ডলার, যার মোট খরচ পড়েছিল ১৯৭ কোটি টাকা। ফলে এই একটি জাহাজেই অতিরিক্ত ৬৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়ছে, যার প্রভাব আমাদের আমদানিতেও পড়ছে। সংঘাতের আগে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ৭৬-৭৯ ডলারের মধ্যে। কিন্তু ১৩ জুনের পর থেকে তা দ্রুত বাড়তে থাকে।
বিশ্ববাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১-১১ জুন প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ৭৬-৭৯ ডলারের মধ্যে। ১২ জুন ইসরায়েল হামলার পরদিন দাম বেড়ে ৮১.৩৭ ডলার হয়। ১৩ জুন তা আরও বেড়ে ৮৫ ডলারে পৌঁছে যায়। ১৬ জুন বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ ডলারে এবং ১৯ জুন সর্বোচ্চ ৯৩.৪১ ডলারে উঠে যায়। ২৩ জুন দাম কমে ৮৯.৮৮ ডলারে এবং ২৪ জুন তা আরও নেমে আসে ৮২ ডলারে।
এদিকে জেট ফুয়েল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল ও মেরিন ফুয়েলের দামও বেড়েছে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিপিসি কর্মকর্তারা। ডিজেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, ‘ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে। তাই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে এবং নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।’