ঢাকা | বঙ্গাব্দ

শশী থারুরকে নিয়ে কংগ্রেস জেরবার, মোদির মুখে মুচকি হাসি

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 25, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি নিজে দল ছাড়বেন নাকি দল তাঁকে বহিষ্কার করবে—এই দুই সম্ভাবনাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মূলত কেরালার এই বিদগ্ধ সংসদ সদস্য নিজের কর্মকাণ্ড দিয়েই এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন।

সম্প্রতি কেরালার নিলাম্বুর বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বামফ্রন্টের প্রার্থীকে হারিয়ে কংগ্রেস জয় পাওয়ার দিনেই শশী থারুর ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেই নিবন্ধে তিনি লেখেন, মোদির উদ্যম, সক্রিয়তা এবং সবার সঙ্গে যুক্ত থাকার মানসিকতা ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি আরও বলেন, এই কারণে মোদি আরও বেশি সমর্থনের যোগ্য।

পেহেলগাম ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি 'অপারেশন সিঁদুর' চালু করেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠান। এর মধ্যে একটি প্রতিনিধি দলের নেতা করা হয় কংগ্রেসের এই চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য শশী থারুরকে। কংগ্রেসের পাঠানো নামের তালিকায় তাঁর নাম না থাকলেও মোদি তাঁকে নিজে বেছে নেন। এরপর থেকেই শশী মোদি বন্দনায় আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন, যার ফলে কংগ্রেসের ভেতরে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।

গত ২৩ জুন দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত শশী থারুরের নিবন্ধে মোদির পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করা হয়। অথচ তার কয়েকদিন আগেই সোনিয়া গান্ধী একই পত্রিকায় মোদি সরকারের ইসরায়েল–ফিলিস্তিন নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। এই দুই বিপরীতমুখী অবস্থান কংগ্রেস নেতৃত্বকে ক্ষুব্ধ করেছে। কংগ্রেস মনে করছে, শশী দলীয় অবস্থান উপেক্ষা করে বারবার মোদি ও বিজেপির প্রশংসা করছেন, যা দলের শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

এই বিতর্ক নিয়ে গতকাল শশী থারুর বলেন, “আমি মোদির নেতৃত্বের প্রশংসা করেছি মানে এই নয় যে বিজেপিতে যোগ দিতে যাচ্ছি। আমি শুধু ভারতের জাতীয় ঐক্য ও স্বার্থের কথা বলেছি।” তিনি আরও বলেন, “দেশের পররাষ্ট্রনীতি কংগ্রেস বা বিজেপির নয়, এটা ভারতের। রাজনৈতিক বিরোধিতা দেশের সীমান্তে শেষ হওয়া উচিত।”

এর আগেও শশী থারুর এমন বিতর্কে জড়ানোর পর দল ছাড়ার ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় অবস্থান উপেক্ষা করে মোদি সরকারের প্রশংসা করার কারণে তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়ছেই। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকও এই দূরত্ব ঘোচাতে পারেনি।

কেরালার নিলাম্বুর উপনির্বাচনের সময় কংগ্রেস তাঁকে প্রচারে রাখেনি। প্রদেশ কংগ্রেস তাঁকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বুঝিয়ে দেয়, রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব খুব একটা নেই। ২০২৬ সালের কেরালা বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কংগ্রেসের কেরালা নেতৃত্ব শশীকে একঘরে রাখতেই আগ্রহী।

শশী থারুর কখনোই গান্ধী পরিবারের অন্ধ অনুগামী ছিলেন না। দলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান ধরে রেখেছেন। ২০২১ সালে গুলাম নবী আজাদের নেতৃত্বে ২৩ জন সিনিয়র কংগ্রেস নেতা দলীয় ব্যর্থতার বিরুদ্ধে সোনিয়া গান্ধীকে যে চিঠি দেন, শশী ছিলেন তাঁদের একজন। এমনকি দলীয় সভাপতি নির্বাচনে তিনি মল্লিকার্জুন খাড়গের বিরুদ্ধেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরপরও কংগ্রেস তাঁকে বহিষ্কার করেনি এবং চলতি লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে টিকিটও দেয়।

তবে, কংগ্রেসের বড় অংশ মনে করছে, শশীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দলত্যাগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, তিনি চান দল তাঁকে বহিষ্কার করুক, যাতে তিনি স্বচ্ছন্দে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। তবে কংগ্রেসের কেরালা নেতৃত্ব মনে করছে, তাঁকে দল থেকে বের না করে গুরুত্ব কমিয়ে রাখা উচিত।

কেরালায় বিজেপির খুব একটা শক্ত অবস্থান নেই। তাই শশী থারুর বিজেপিতে যোগ দিলেও বিজেপির খুব বড় লাভ হবে না। তবে বিজেপি এটা প্রচারে কাজে লাগাবে যে, কংগ্রেসে গণতন্ত্র নেই, গান্ধী পরিবারের বিরোধিতা করলে কেউ টিকতে পারে না। এছাড়া মোদি নিজেও শশীর মতো শিক্ষিত, আন্তর্জাতিকমুখী ব্যক্তিদের পছন্দ করেন। এর আগে এস জয়শঙ্কর, অশ্বিনী বৈষ্ণো, রাজীব চন্দ্রশেখরের মতো ব্যক্তিদের তিনি সামনে এনেছেন।

সব মিলিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—শশী থারুর কী করবেন? ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি থেকে উগ্র হিন্দুত্বের দিকে ঝুঁকবেন, নাকি কংগ্রেসে উপেক্ষিত হয়েও টিকে থাকার চেষ্টা করবেন? কংগ্রেসও কি এখন তাঁকে ঝুঁকি নিয়ে দলছাড়া করতে চাইবে? বিশেষ করে যখন সামনে কেরালার গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচন? এসব প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স