জমিজমা বিক্রিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা কমিয়ে আনতে জমি, প্লট ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের ব্যয় আরও কমিয়েছে সরকার। তবে রাজধানী ঢাকায় এখনো জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধনের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার সম্পদ নিবন্ধনে খরচ পড়বে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে, ২ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় উৎসে কর আরও কমানো হয়।
এবারের বাজেটে ফ্ল্যাট ও ভবনে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগও বন্ধ করা হয়েছে। যদিও প্রস্তাবিত বাজেটে সেই সুযোগ রাখার কথা ছিল।
বর্তমানে জমি বা সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে উৎসে কর ছিল ৮ শতাংশ, অন্যান্য সিটি করপোরেশনে ৬ শতাংশ এবং পৌরসভা পর্যায়ে ৪ শতাংশ। ২ জুনের প্রস্তাবে এক দফা কমিয়ে তা করা হয়েছিল যথাক্রমে ৬, ৪ ও ৩ শতাংশ। তবে চূড়ান্ত বাজেট অনুমোদনের সময় তা আরও কমিয়ে যথাক্রমে ৫, ৩ ও ২ শতাংশ করা হয়েছে।
এ ছাড়া জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধনে দেড় শতাংশ স্ট্যাম্প শুল্ক, ১ শতাংশ নিবন্ধন ফি, ৩ শতাংশ স্থানীয় সরকার ফি এবং ভ্যাট রয়েছে ২ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ পর্যন্ত। যেমন, ঢাকার গুলশানে ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের কম আয়তনের একটি ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় এত দিন ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল, এখন সেটি কমে হয়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৩ সালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জমিকে পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করে (ক থেকে ঙ)। এই শ্রেণিভিত্তিক করহার অনুযায়ী ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল ও তেজগাঁও থানার সব শ্রেণির জমিতে এত দিন ৮ শতাংশ উৎসে কর ছিল, যা এবার কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ধানমন্ডি, রমনা, পল্টন, নিউমার্কেট, কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায়ও একই হারে কর কমানো হয়েছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ বাদে দেশের অন্য সিটি করপোরেশন বা জেলা সদরে জমি নিবন্ধনে করহার ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে পৌরসভা পর্যায়ে জমি নিবন্ধনের কর ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ক থেকে ঘ শ্রেণির জমিতে প্রতি বর্গমিটারে ৮০০ টাকা বা দলিলের উল্লেখিত মূল্যের ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে, যা আগে ছিল ৮ শতাংশ। ‘ঙ’ শ্রেণির জমিতে করহার প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ টাকা বা ৩ শতাংশ।
আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, “নিবন্ধন ব্যয় ৩ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই ইতিবাচক। এতে নিবন্ধন কিছুটা বাড়বে। তবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছি, নিবন্ধন ব্যয় ৭-৮ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। ধাপে ধাপে এটা বাস্তবায়ন করা গেলে ক্রেতারা সহজে তাদের সম্পদ নিবন্ধন করবেন। এতে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।”