কোরবানির ঈদের পর থেকে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সময়ে বেশিরভাগ মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মোটা এবং মাঝারি চালের দামেও, যেগুলোর দামও কেজিতে প্রায় দুই টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি, গত এক সপ্তাহের মধ্যে কিছু সবজির দামেও সামান্য বাড়তি প্রবণতা দেখা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজারে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
মাঠ থেকে সম্প্রতি বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ায় বাজারে ধানের সরবরাহ বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। মিনিকেট নামে পরিচিত ছাঁটাই চাল মূলত বোরো ধান থেকে তৈরি হয়। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, চলতি মাসের শুরুতে উৎপাদন স্থলে ধানের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তখনই পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মিনিকেট চালের দাম বাড়ে। এর আগে গত মে মাসের শুরুতে বোরো ধানের চাল বাজারে আসার পর মিনিকেট চালের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা কমেছিল।
বাজারে দেখা গেছে, ঢাকার খুচরা দোকানগুলোতে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর, রসিদসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে এসব চালের দাম ছিল ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা। অর্থাৎ, প্রায় ৫ থেকে ৬ টাকা দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ঈদের আগে প্রায় ৮০ টাকার আশপাশে ছিল।
শহরের মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত ভোক্তারা প্রধানত মিনিকেট চাল বেশি খেয়ে থাকেন। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চাল রয়েছে, যার মধ্যে মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের দাম তুলনামূলক বেশি।
চালের দাম একবারে ৫-৬ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ গৃহিণী নাদিয়া ইয়াসমিনসহ অনেকের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, চালের দাম বাড়লে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
সরু চালের দাম বাড়ার প্রভাবে মোটা ও মাঝারি চালের দামও কেজিতে প্রায় দুই টাকা বেড়ে ৫৫-৫৭ টাকা ও ৬০-৬২ টাকা পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণত মোটা চাল ৫০ টাকার আশপাশে এবং মাঝারি চাল ৫৫-৫৮ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
মুরগির দাম আগের সপ্তাহের মতোই রয়েছে; সোনালি মুরগির দাম প্রায় ৩০০ টাকা প্রতি কেজি, আর ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যায়ে রয়েছে। ডিমের দামও কমে ডজন প্রতি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যদিও পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানগুলো কিছুটা বেশি দাম নিতে পারেন।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনন্দিন বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে সরু চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম কেজিতে ১ টাকা বেড়েছে।
সবজির দামের দিকে গেলে, টমেটোর দাম ১২০ থেকে ১৮০ টাকা, বরবটি, কাঁকরোল ও কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক সপ্তাহ আগে ১০ থেকে ২০ টাকা কম ছিল। পটোল, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, ঢ্যাঁড়সের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দামও বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা প্রতি কেজি হয়েছে, যা ঈদের আগে ৫ টাকা কম ছিল। পেঁয়াজের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে রয়েছে। একই সময়ে আমদানি করা রসুন, আদা, দারুচিনি ও এলাচের দাম কিছুটা কমেছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে গৃহিণী নাদিয়া ইয়াসমিন জানান, ‘একবারে চালের দাম ৫-৬ টাকা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের চিন্তা বাড়ছে, কারণ চালের দাম বাড়লে সাধারণত অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বাড়ে।’
সামগ্রিকভাবে বাজারে চাল ও কিছু সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা চলছে, যা ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।