ঢাকা | বঙ্গাব্দ

প্রবাসী আয় ও বিদেশি ঋণে রিজার্ভ বেড়ে ৩ হাজার কোটি ডলার

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 27, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈধ পথে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি এনেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের ওপর চাপ কমে এসেছে। গত ১০ মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে না। এ সময় দেশের ব্যাংক ও রাজস্ব খাতের সংস্কার, বাজেট সহায়তা এবং ঋণ হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ঋণ আসায় রিজার্ভ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান ঋণ কর্মসূচির বকেয়া দুই কিস্তি হিসেবে ১৩৪ কোটি ডলার দেশে এসেছে, যা ইতোমধ্যে রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক থেকে ৫০ কোটি ডলার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৯০ কোটি ডলার ঋণ এসেছে, যা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৫১ বিলিয়ন (৩ হাজার ৫১ কোটি) মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে আইএমএফের বিপিএম-৬ হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২৫.৫১ বিলিয়ন (২ হাজার ৫৫১ কোটি) ডলার। দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৯.৮০ বিলিয়ন (১ হাজার ৯৮০ কোটি) ডলারে পৌঁছেছে।

দেশের ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা বিবেচনায় আইএমএফ আরও ৯০ কোটি ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান ও ওপেক ফান্ড থেকে আরও ১৫০ কোটি ডলারের ঋণ আসার প্রত্যাশা রয়েছে, যা চলতি মাসের মধ্যে রিজার্ভে যুক্ত হবে। এতে জুন শেষে মোট রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন (৩ হাজার ২০০ কোটি) ডলারে পৌঁছাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধি ঋণের মাধ্যমে হলেও দীর্ঘমেয়াদি ও কম সুদের হওয়ায় তা ভবিষ্যতে রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে না। এসব ঋণ দেশের বাজেট বাস্তবায়ন ও ব্যাংক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারে কাজে লাগানো হবে। সংস্কারের ফলে অর্থনীতি উন্নতি পাবে, রপ্তানি ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার, আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ২৯.৪৬ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি। রপ্তানি আয়ে ৯ শতাংশের বৃদ্ধি দেখা গেছে, ফলে আমদানিও ৫ শতাংশ বেড়েছে, তবু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।

২০২৪ সালের ৩১ জুলাই, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট রিজার্ভ ছিল ২৫.৯২ বিলিয়ন ডলার, বিপিএম-৬ অনুযায়ী ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলার।

ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থ পাচার কমায় বৈধ পথে প্রবাসী আয় বেড়েছে। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে বিদেশি ঋণ সহায়তা দিচ্ছে, যার ফলে রিজার্ভে উল্লম্ফন ঘটছে।

ডলার সংকটের পরিসমাপ্তি

তিন বছর ধরে দেশের অর্থনীতিতে বিরাজমান ডলার সংকট কমতে শুরু করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারের অস্থিরতায় দেশের আমদানি খরচ বেড়ে গেলে ডলারের তীব্র সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি দেখা দিয়েছিল, যা মূল্যস্ফীতির মাত্রা বাড়িয়েছিল।

বর্তমানে ডলারের বাজারে স্বস্তির বাতাস বইছে, আর্থিক সূচকগুলো ইতিবাচক দিকে গড়াচ্ছে, যদিও উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে এখনও প্রভাব ফেলছে।

ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে প্রবাসী আয় থেকে ডলারের দাম কিছুটা কমেছে। আগে প্রবাসী এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে দেশের ব্যাংকগুলো ডলার কিনত ১২৩ টাকার বেশি দামে, যা এখন নেমে এসেছে ১২২.৭০ থেকে ১২২.৮০ টাকার মধ্যে। ফলে আমদানিকারীরা আনুষ্ঠানিক ডলার বাজারে ১২৩-১২৪ টাকায় আমদানি দায় মেটাতে পারছে।

ব্যাংকাররা উল্লেখ করছেন, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ পাচার রোধের পদক্ষেপ ডলার সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নজরদারি বৃদ্ধির ফলে বৈধ পথে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বেড়েছে, যা আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে।

ডলারের বাজার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নেওয়া পদক্ষেপগুলো কার্যকর হয়েছে, ফলে ডলারের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

বর্তমানে আমদানিতে কড়াকড়ি কম হওয়ায় আমদানিকারীরা ব্যাংকে গিয়েই ডলার পাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের বাজারে স্বস্তি আসা সুখবর। তবে আমদানি আরও উন্মুক্ত করতে হবে, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি ঘটে। ঋণ বাড়িয়ে রিজার্ভ বৃদ্ধি করাই সবচেয়ে ভালো নয়, কারণ এগুলো সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হওয়ায় চাপ কিছুটা কম। ঋণ নেওয়া হচ্ছে সংস্কারের জন্য, যা সফল হলে দেশের জন্য ভালো ফল হবে।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স