ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সার্বিয়ায় পুলিশের সাথে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের তীব্র সংঘর্ষ

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 29, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুচিচের ১২ বছরের শাসনের অবসান এবং তাৎক্ষণিক নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে কয়েক ডজন মানুষকে আটক করা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

শনিবার (২৮ জুন) অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভটি প্রায় আট মাস ধরে চলা ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের অংশ হিসেবে সংঘটিত হয়, যা সার্বিয়ায় ভুচিচের কঠোর শাসন ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ‘আমরা নির্বাচন চাই’ স্লোগান দিয়ে বেলগ্রেডের স্লাভিয়া স্কোয়ার এবং আশেপাশের রাস্তাগুলোতে অবস্থান নেন, যদিও অনেকেই বিক্ষোভস্থলে পৌঁছাতে পারেননি।

পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। পুলিশ মহাপরিচালক দ্রাগান ভাসিলজেভিক এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে এবং সংঘর্ষে ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

ভুচিচ ইনস্টাগ্রামে দাবি করেছেন, বিক্ষোভকারীরা সার্বিয়াকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।

স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘আর্কাইভ অব পাবলিক গ্যাদারিংস’ অনুযায়ী, প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ এই সমাবেশে অংশ নেন, যা ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ।

গত নভেম্বরে নোভি সাদ শহরের একটি রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জনের মৃত্যু থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে দেখা দেয়। অনেক সার্বিয়ান অভিযোগ করেন, অবকাঠামোগত দুর্নীতি ও অবহেলা এই দুর্ঘটনার মূল কারণ।

চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুসেভিচ এ বছরের শুরুতে পদত্যাগ করলেও ভুচিচ ক্ষমতায় টিকে রয়েছেন। আইন পড়া ছাত্র স্টেফান ইভাকোভিচ বলেন, “আমরা আবার প্রমাণ করেছি যে আমরা থামব না। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব।”

উত্তর সার্বিয়ার সিদ শহরের কৃষক স্লাদজানা লোজানোভিচ (৩৭) বলেন, তিনি ছাত্রদের সমর্থন করতে বেলগ্রেডে এসেছেন। তিনি বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দখল হয়ে গেছে এবং দুর্নীতি ব্যাপক। নির্বাচনই একমাত্র সমাধান, তবে আমি মনে করি না ভুচিচ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়বেন।”

সমাবেশের আগে আয়োজকরা ভুচিচকে রাত ৯টার মধ্যে নির্বাচন ঘোষণা করার ‘আলটিমেটাম’ দেন। সমাবেশ শেষে তারা জনতাকে ‘স্বাধীনতা নিজের হাতে নেয়ার’ জন্য ‘গ্রিন সিগনাল’ দেয়ার আহ্বান জানায়।

তারা ইনস্টাগ্রামে এক বিবৃতিতে বলেন, “ক্ষমতাসীনদের কাছে দাবি মেনে নেয়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল, কিন্তু তারা নিপীড়ন বেছে নিয়েছে। পরিস্থিতির উত্তেজনা কমানো তাদের দায়িত্ব।”

ভুচিচ, যিনি প্রগ্রেসিভ পার্টি-নেতৃত্বাধীন জোটের নেতৃত্বে সংসদের ২৫০ আসনের মধ্যে ১৫৬ আসন নিয়ন্ত্রণ করেন, সাংবাদিকদের বলেন, “বিদেশী শক্তি এই বিক্ষোভের পেছনে কাজ করছে।” তিনি পুলিশকে সংযত থাকার নির্দেশ দেন, তবে সতর্ক করে বলেন, “নাশকতা সৃষ্টিকারীদের যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ভুচিচ ইতোমধ্যে তাৎক্ষণিক নির্বাচন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং ২০২৭ সাল পর্যন্ত তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যেদিন সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে তার ক্ষমতা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। বিরোধীরা তাকে ও তার সহযোগীদের সংগঠিত অপরাধ, বিরোধীদের ওপর সহিংসতা এবং মিডিয়া স্বাধীনতা হ্রাসের অভিযোগ করেছেন, যা তিনি অস্বীকার করেন।

বিক্ষোভের আগে পুলিশ প্রায় এক ডজন বিরোধী কর্মীকে আটক করে, যাদের বিরুদ্ধে সংবিধান বিধ্বংসী কার্যকলাপ এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন ক্রোয়েশীয় ও মন্টিনিগ্রোর থিয়েটার পরিচালককেও দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

সমালোচকদের মতে, বিক্ষোভে অংশগ্রহণ রোধ করতে সার্বিয়ার রেল কর্তৃপক্ষ একটি ‘বোমা হামলার’ গুজব ছড়িয়ে ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। গত মার্চে লাখো মানুষ অংশ নেওয়া সার্বিয়ার ইতিহাসের বৃহত্তম বিক্ষোভের আগেও কর্তৃপক্ষ একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স