১৩ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত: কর্মস্থলে অনুপস্থিতি ও 'পলায়নের' অভিযোগ
ঢাকা, ২৯ জুন: গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পুলিশ বাহিনীতে দেখা গেছে এক নতুন পরিস্থিতি। অনেক পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগ দিয়ে কিছুদিন পর উধাও হয়ে যান, কেউ ছুটি নিয়েও অনুপস্থিত, আবার কেউ ছুটি ছাড়াই লাপাত্তা। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে যোগ না দেওয়া ১৩ জন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার।
আজ রোববার (২৯ জুন) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে ১৩টি পৃথক প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। গত ২৬ জুন উপসচিব নাসিমুল গনি এই প্রজ্ঞাপনগুলোতে সই করেন।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের পদ ও বিবরণ
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বরখাস্ত হওয়া ১৩ জন কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন তিনজন পুলিশ সুপার, আটজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং দুজন সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তাদের অনুপস্থিতির সময়কাল এবং বর্তমান অবস্থা নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো:
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন (এটিইউয়ের সাবেক, বর্তমানে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত): তিনি গত ১ জানুয়ারি থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকারি বিধিমালা অনুসারে 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান (রংপুর জেলার সাবেক, বর্তমানে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত): তিনি গত ১৬ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল (নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক, বর্তমানে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত): তিনি গত ১ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর হাছান (নৌ পুলিশের): গত বছরের ৩ অক্টোবর ১৫ দিনের হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে ছুটি মঞ্জুর হলেও, তিনি ৮ অক্টোবর কর্মস্থল ত্যাগ করেন। ২৩ অক্টোবর কর্মস্থলে ফেরার কথা থাকলেও তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা বলে আরও ৬০ দিনের ছুটি বৃদ্ধির আবেদন করেন, যা মঞ্জুর হয়। এরপরও স্থায়ী ঠিকানায় দুইবার নোটিশ জারি করা সত্ত্বেও তিনি কর্মস্থলে যোগদান না করে বিদেশে অবস্থান করছেন। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম (রমনা বিভাগের সাবেক এডিসি, বর্তমানে সিলেট ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের): তিনি গত ২৬ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শামীম (ডিএমপির সাবেক এডিসি): তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়রুল ইসলাম (ডিএমপির সাবেক এডিসি, বর্তমানে কক্সবাজার এপিবিএন-এর): তিনি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিশু বিশ্বাস (ডিএমপি ডিবির সাবেক এডিসি, বর্তমানে জামালপুর ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের): তিনি গত বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্যা (রাঙ্গামাটি এপিবিনের): তিনি গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুবাইয়াত জামান (তেজগাঁও বিভাগের সাবেক এডিসি, বর্তমানে সুনামগঞ্জ ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের): তিনি গত ২৯ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান (বরিশাল র্যাব-৮ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার): তিনি গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মাহমুদুল হাসান (রাজারবাগ পুলিশ টেলিকম ভবনের): তিনি গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ ইমরুল (কক্সবাজার উখিয়া এপিবিনের): তিনি গত ২৮ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। 'পলায়নের' অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।