ইউসুফ (আ.) ছিলেন ইয়াকুব (আ.)-এর সবচেয়ে প্রিয় পুত্রদের একজন। তাঁর ১১ জন ভাই ছিলেন। তিনি শুধু একজন নবীই নন, বরং তাঁর চরিত্রে ছিল অতুলনীয় সৌন্দর্য, উদারতা এবং উত্তম আখলাকের নিদর্শন। তাঁর জীবন ছিল ধৈর্য, শিক্ষা ও আল্লাহর প্রতি দৃঢ় আস্থার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘‘মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত হলেন ইউসুফ (আ.)—যিনি একজন নবী, এক নবীর পুত্র, এক নবীর পুত্র এবং আল্লাহর প্রিয় বন্ধুর পুত্র।’’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩৭৪)
পবিত্র কোরআন কিংবা সহিহ হাদিসে ইউসুফ (আ.)-এর মৃত্যুর স্থান বা তাঁর কবর কোথায়, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে ঐতিহাসিকদের মাঝে এ নিয়ে নানা মত রয়েছে।
অনেকের মতে, ইউসুফ (আ.)-এর কবর ফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের পূর্ব প্রান্তে, টেল বালাতার পাশেই অবস্থিত। এই স্থানটি বহু বছর ধরে ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার জায়গা হিসেবে বিবেচিত। তবে অনেক ইতিহাসবিদ নাবলুসে তাঁর কবর থাকার দাবি নাকচ করেছেন। যদিও ইহুদিদের দাবি—মুসা (আ.) বনি ইসরাঈলকে নিয়ে মিসর ছাড়ার সময় ইউসুফ (আ.)-এর ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মরদেহ সঙ্গে নিয়ে নাবলুসে এনে দাফন করা হয়। তবে উল্লেখ্য, যে তাওরাতে এ বর্ণনা আছে, তা মুসা (আ.)-এর সময়ের প্রায় ৬০০ বছর পর লিখিত, ফলে এই দাবির ঐতিহাসিক নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ।
আরেকদল মনে করেন, ইউসুফ (আ.)-এর কবর মিসরে ছিল। জনশ্রুতি আছে, মৃত্যুর আগে তিনি ওসিয়ত করেছিলেন যেন তাঁকে হেবরোনে দাফন করা হয়। প্রথমে তাঁকে মিসরের পশ্চিমাঞ্চলে দাফন করা হলেও পরে পূর্বাঞ্চলে স্থানান্তর করা হয়। একপর্যায়ে তাঁর মরদেহ একটি লোহার সিন্দুকে রেখে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, যা নদীর তলদেশে স্থির করে রাখা হয়। দীর্ঘদিন পর, মুসা (আ.) মিসর ত্যাগের সময় সেই সিন্দুকটি উদ্ধার করেন।
এ সংক্রান্ত বিখ্যাত বর্ণনায় জানা যায়, মুসা (আ.) পথ হারালে তিনি খোঁজ করেন, কে তাঁকে ইউসুফ (আ.)-এর কবর দেখাতে পারে। তখন একজন বৃদ্ধ নারী তাঁকে জানানোর শর্তে দীর্ঘায়ু কামনা করেন। মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য দোয়া করেন, এরপর তিনি ইউসুফ (আ.)-এর কবরের অবস্থান দেখিয়ে দেন।
আরও এক বর্ণনায় জানা যায়, ইউসুফ (আ.)-এর মরদেহ তাঁর বাবা ইয়াকুব (আ.)-এর কবরের পাশে এবং পূর্বপুরুষ ইবরাহিম (আ.)-এর কবরের সন্নিকটে দাফন করা হয়। ধারণা করা হয়, এই কবরস্থান ‘সোলায়মানীয় প্রাচীরের পশ্চিমে’ অবস্থিত। সেখানে একসময় ‘সুলতান আল-মালিক আন-নাসির হাসান’-এর নামে একটি মাদ্রাসাও ছিল, যা বর্তমানে দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এই স্থান ‘আইন আল-তাওয়াশি’ এলাকার কাছে অবস্থিত।
সব মিলিয়ে, ইউসুফ (আ.)-এর কবরের সুনির্দিষ্ট অবস্থান নিয়ে ঐতিহাসিকভাবে ভিন্ন মত থাকলেও তাঁর স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব সমগ্র মুসলিম বিশ্বে চিরভাস্বর।