দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, এনসিপি বাদে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে অস্বস্তি বোধ করছে। একইসঙ্গে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
রুমিন ফারহানা বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এনসিপি বাদে সবাই অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডে অস্বস্তি প্রকাশ করছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি এবং আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন মাঠে থাকা রাজনৈতিক জোটগুলোরও ড. ইউনূসের ব্যাপারে স্পষ্ট আপত্তি রয়েছে। সাধারণ মানুষের কথাতেও স্পষ্ট—তারা খুশি নয়, তারা জানতে চায় কবে নির্বাচন হবে, কবে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরবে।”
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমি সম্প্রতি ইকোনমিস্টের রিপোর্ট দেখেছি। সেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনো বড় রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন করা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নয়। একইসঙ্গে, বিবিসির সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূসকে কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো একধরনের পক্ষপাত দেখালেও এখন তারা সেই অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছে। বিশেষ করে ইকোনমিস্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।”
লন্ডন বৈঠকের ফলোআপ এবং সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগাযোগ হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রতিদিনই ড. আলী রিয়াজের নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না। তারা ভেবেছিলেন, খুব শিগগিরই ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে আবার ‘বাংলাদেশ দিবস’ বাদ পড়েছে। ঐকমত্য থেকে তারা আদতে কী আশা করছেন, সেটাও পরিষ্কার নয়।”
৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে রুমিন বলেন, “৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে যে ঐকমত্য হয়েছে, যদি সেটি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। আর বিএনপি ইতোমধ্যেই বড় ছাড় দিয়েছে। আমরা পরিষ্কার বলেছি, কোনো ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। এটা বিএনপির বড় রাজনৈতিক ছাড়। তবে নেগোসিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী দুইপক্ষই ছাড় দেবে। তাই আমাদের প্রশ্ন—আমরা ছাড় দিলাম, আপনারা কী দিলেন? আমাদের এই ছাড়কে দুর্বলতা ভাবলে ভুল করবেন।”
আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ হওয়া ভোটের ওপর কী প্রভাব ফেলবে—এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “শুরু থেকেই বিএনপি বলছে, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা বা তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে পথ বিএনপি তৈরি করেছে, আমরা বরাবরই বিশ্বাস করি, জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে, কে ক্ষমতায় আসবে, কে প্রত্যাখ্যাত হবে। পাকিস্তানে জামায়াত সফল হতে পারেনি, বাংলাদেশেও পারবে না।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালো জানে, কাকে ভোট দিতে হবে, কোন দলের পাশে থাকতে হবে, কোন দলকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তাই জনগণের হাতে এই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়াই সবচেয়ে ভালো হতো।”