যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় সোমবার (১ জুলাই) সিরিয়ার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাতিলের একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর ফলে গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সিরিয়ার আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তি সহজ হবে এবং দেশটির ওপর দীর্ঘদিনের অবরোধ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট জানান, নিষেধাজ্ঞা বাতিল হলেও সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, তার সহযোগী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, মাদক পাচারকারী, রাসায়নিক অস্ত্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস) এবং ইরানের সহযোগীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
উল্লেখযোগ্য যে, গত ডিসেম্বর ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের হামলার পর আসাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর থেকেই সিরিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে জানান, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত সিরিয়ার জন্য বহুল প্রত্যাশিত পুনর্গঠন ও উন্নয়নের পথ খুলে দেবে। তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দরজা খুলবে এবং দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাধাগুলো দূর হবে।
গত মে মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠকে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রক্রিয়া শুরু করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইতোমধ্যে তাদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
মার্কিন বিশেষ দূত থমাস ব্যারাক এ সিদ্ধান্তকে ‘একটি কঠিন, জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সফল সমাপ্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “সিরিয়াকে নতুন একটি সুযোগ দেওয়ার সময় এসেছে এবং আমরা সেটাই করেছি।”
নতুন আদেশ অনুযায়ী, সিরিয়াকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তালিকায় রাখার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, সিরিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা, বিদেশি সন্ত্রাসীদের দমন, ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিষিদ্ধ করা এবং ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসীদের বহিষ্কারের মতো বিষয়গুলোতে কী অগ্রগতি করছে, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এদিকে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, গত মার্চে সিরিয়ার উপকূলীয় এলাকায় তিন দিনের হত্যাকাণ্ডে ১,৫০০-এর বেশি আলাউয়ি সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হয়, যার সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি।
তবে দেশটির সাধারণ মানুষ আশা করছে, নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সহজ হবে, বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং বাণিজ্য প্রসারিত হবে।
এর আগে, গত মে মাসে ট্রাম্পের ঘোষণার পর মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ অন্তর্বর্তী সিরীয় সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লেনদেনের জন্য সাধারণ লাইসেন্স প্রদান করে। যদিও সিজার অ্যাক্টের আওতায় কিছু নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, নতুন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ২০০৪ সালে জারি করা জাতীয় জরুরি অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাহী আদেশগুলো বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য বিধিনিষেধ শিথিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।