সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের শুরু করা অরাজনৈতিক কর্মসূচি এখন রূপ নিয়েছে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে এ আন্দোলনের সূচনা হয় ২০১৮ সালে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বৈষম্যমূলক এই ব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে তখন চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ধারাবাহিক বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও কর্মসূচি পালন করা হয়। আন্দোলনের চাপের মুখে শেখ হাসিনা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে প্রায় ৪৬ বছর ধরে চলে আসা কোটাব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন।
কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে, ২০২৪ সালের ৫ জুন আদালতের রায়ের মাধ্যমে পুনরায় কোটাব্যবস্থা বহাল হয়। এতে নতুন করে আন্দোলনের আগুন জ্বলে ওঠে। ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। চলতে থাকে সারাদেশে আন্দোলনের প্রস্তুতি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা সবাই এক হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম জোরালো প্রতিবাদ জানাতে হবে। এরপরই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করি।”
জুনের শেষদিকে কয়েকদিন আন্দোলন চলার পর কোরবানির ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলে, সারাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার কাজ শুরু হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে কোটা বাতিলের আদেশ জারি হলেও আদালতের রায়ে তা পুনর্বহাল হয়। এরপর ১ জুলাই থেকে ধারাবাহিক আন্দোলনের সূচনা হয়। শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে একত্রিত হন। যমুনা টেলিভিশন আন্দোলনের শুরু থেকেই সংবাদ কাভারেজে গুরুত্ব দেয়।
১ জুলাই বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে মিছিল শুরু হয়। রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সমাবেশে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীরা ৪ জুলাইয়ের মধ্যে কোটা ইস্যুতে চূড়ান্ত সমাধান দাবি করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ জানান, “২৮ ও ২৯ জুন আমরা সবাই মিলে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে ব্যানার নির্ধারণ করি। ১ জুলাই গ্রন্থাগার থেকে মিছিল শুরু করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করি।”
একইদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ শুরু হয়। সারাদেশে আন্দোলনের তীব্রতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “তখন শিক্ষকরা ‘প্রত্যয়’ নামে পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এতে ক্লাস ও পরীক্ষার চাপ না থাকায় ১ জুলাইয়ে বিশাল জনসমাগম সম্ভব হয়, যা আমাদের সাহস বাড়িয়ে দেয়।”
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “দেশে বিরাজনীতিকরণের সময় পেরিয়ে আসার কারণে আন্দোলনের ভাষা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভাষাগত নতুনত্ব ও সহজবোধ্য বক্তব্যের মাধ্যমে রাজনীতিবিমুখ মানুষদেরও সম্পৃক্ত করতে পেরেছি।”
শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মবিরতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছিলেন, যা ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে।