ঢাকা | বঙ্গাব্দ

২ জুলাই: গণপদযাত্রায় শাহবাগে নামে শিক্ষার্থীদের ঢল

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 2, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

২ জুলাই ২০২৫—এই দিনটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়। ঠিক এক বছর আগে এই দিনে শুরু হয়েছিল শেখ হাসিনার সরকারের পতনের কাউন্টডাউন। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন ধীরে ধীরে গণআন্দোলনে রূপ নেয়, যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল শাহবাগ অবরোধসহ নানা কর্মসূচি।

‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত সেই আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জুলাইয়ের সাহসী যোদ্ধারা প্রকাশ করেছেন বেশ কিছু অজানা ঘটনা।

২০২৪ সালের জুন থেকেই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ঈদের ছুটির পর আন্দোলনকে আরও বৃহৎ পরিসরে সংগঠিত করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ করে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এরপর ২ জুলাই দুপুর পৌনে ৩টার দিকে গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয় গণপদযাত্রা। পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন প্রায় ১ ঘণ্টার জন্য। সেখানে পুলিশের বাধা আসলেও, ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানে সাহসী ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি পুলিশ।

কীভাবে আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনেই এত শিক্ষার্থী একত্রিত করা সম্ভব হয়েছিল, সে প্রশ্নের উত্তরে জুলাই সমন্বয়ক হাসিব আল জামান জানান, ঈদের ছুটির সময় থেকেই সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। যার ফলে ঢাকার বাইরে থেকেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। আন্দোলনের সমন্বিত পরিকল্পনা এবং দাবির যৌক্তিকতা শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করে তোলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজসহ দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ বলেন, এই আন্দোলন হঠাৎ তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই দেশব্যাপী ছাত্রদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছিল। পরিকল্পনা ছিল আন্দোলনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে রাজু ভাস্কর্য ঘিরে শাহবাগে নিয়ে যাওয়া, সেখান থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে অবরোধ গড়ে তোলা।

শিক্ষকদেরও পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে চলমান অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি আন্দোলনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবি মিলে যায়। আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনেই শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি, ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত হওয়া শিক্ষার্থীদের উত্তাল করে তোলে।

প্রথমদিকে দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থান, দমন-পীড়ন, গুম-খুনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। ‘হাসিনা প্রশাসন’ পতনের দিনক্ষণ গণনা শুরু হয়।

জুলাই বিপ্লব দেশের ইতিহাসে শুধু একটি আন্দোলন নয়, বরং তা ছিল ছাত্র-জনতার সম্মিলিত রক্ত-ঘাম-ত্যাগের এক অধ্যায়, যা পরিবর্তনের সূচনা করে দেয়।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স