১৯৭৩ সালের পর এবারই সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে মার্কিন ডলার। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ডলারের রেকর্ড পতন হয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগকারীরা এর জন্য মূলত দায়ী করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিকে। বিশেষ করে ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ, ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে মন্তব্য এবং বড় কর বিলের কারণে ডলারের নিরাপদ মুদ্রা হিসেবে অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে।
ডলার সূচকে বড় ধস
ডলার সূচক (Dollar Index), যা ছয়টি প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান পরিমাপ করে, সেটি ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ১০.৮ শতাংশ কমে গেছে। ট্রাম্পের অস্থির শুল্ক নীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর তার চাপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা কেড়ে নিচ্ছে।
পতনের মূল কারণগুলো
১. শুল্ক যুদ্ধ: চলতি বছরের ২ এপ্রিল থেকে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়েছে, যার প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। ‘এসঅ্যান্ডপি ৫০০’ সূচক মাত্র তিন দিনে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।
২. ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন: ট্রাম্প প্রকাশ্যে ফেডারেল রিজার্ভের নীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে করে ভবিষ্যৎ মুদ্রানীতির পূর্বাভাস নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
৩. বড় কর বিল: ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘বিগ বিউটিফুল’ ট্যাক্স বিলের কারণে আগামী দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের পরিমাণ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়তে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
৪. সুদের হার কমার সম্ভাবনা: চলতি বছরে ২-৩ বার ফেড সুদের হার কমাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ডলারের মানকে আরও দুর্বল করবে।
স্বর্ণের দাম বাড়ছে
ডলার দুর্বল হওয়ায় বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছে। যার ফলে স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
ডলারের পতনের প্রভাব
-
মার্কিন রপ্তানি সস্তা হলেও শুল্ক যুদ্ধের কারণে এর সুফল অনিশ্চিত।
-
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বস্তি: ডলার দুর্বল হলে ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর (যেমন জাম্বিয়া, ঘানা, পাকিস্তান) ডলারভিত্তিক ঋণ পরিশোধ সহজ হবে।
-
কমোডিটি রপ্তানিকারকরা লাভবান: তেল, ধাতু ও কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলো (যেমন ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, চিলি) ইতিবাচক প্রভাব পাবে।
অন্যান্য মুদ্রার অবস্থা
-
ইউরো ১৩ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে (বর্তমানে ১ ইউরো = ১.১৭ ডলার)।
-
জার্মানি ও ফ্রান্সের বন্ডে বিনিয়োগ বেড়েছে।
-
ইউরোপের শেয়ারবাজার ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ডলারে রূপান্তর করলে প্রায় ২৩ শতাংশ লাভ।
অর্থনীতিবিদদের সতর্কবার্তা
যদিও ডলার এখনও বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা, তবে ট্রাম্পের নীতির কারণে এর প্রতি আস্থা কমছে। ব্যাংক জে সাফ্রা স্যারাসিনের প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্স্টেন জুনিয়াস বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগের জন্য আগের মতো আর নিরাপদ জায়গা নয়।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ডলারের পতন আরও তীব্র হতে পারে।