নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে। গত সোমবার (৩০ জুন) সমাপ্ত এ সময়কালে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭ টি টিইইউএস (২০ ফুট সমতুল্য) কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্পন্ন হয়েছে, যা বন্দরের গত ৪৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরটি ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল। এ ছাড়াও, কার্গো হ্যান্ডলিং এবং জাহাজ আগমনেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পুরোনো রেকর্ড ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে, যেখানে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল। বিদায়ী অর্থবছরে সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর।
কনটেইনার বহনকারী জাহাজের মাধ্যমে মোট পণ্যের ২৩ শতাংশ পরিবহন হয়, বাকি ৭৭ শতাংশ হয় বাল্ক ও হ্যাচযুক্ত জাহাজে। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রথমবারের মতো কনটেইনার পরিবহন শুরু হয়।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে সঠিক নির্দেশনা, কঠোর পরিশ্রম এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা। এছাড়া বন্দর অটোমেশন সার্ভিস, ই-গেট পাস কার্যক্রম, কনটেইনার অপারেটিং সিস্টেমের আধুনিকায়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন হ্যান্ডলিং কার্যক্রমকে গতিশীল করেছে। দ্রুত কনটেইনার ডেলিভারি ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সহযোগিতাও এ সাফল্যের অংশ।
শুধু কনটেইনার নয়, কার্গো হ্যান্ডলিং-এও প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। বিদায়ী অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৩ কোটি ৭ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টনের চেয়ে বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে ৪ হাজার ৭৭টি জাহাজ ভিড়েছে, যা আগের বছরের ৩ হাজার ৯৭১টির তুলনায় বৃদ্ধি।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ পরিচালনা করে। বিশ্ববিখ্যাত শিপিং সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টের র্যাঙ্কিং অনুসারে, বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বন্দরের মধ্যে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের দিক থেকে এই বন্দরের অবস্থান ৬৭তম।
বন্দর সূত্র জানায়, নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও — যেমন জুলাই গণঅভ্যুত্থান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, দুই ঈদে ছুটি, কাস্টম হাউসে কর্মবিরতি ও পরিবহন ধর্মঘট — প্রায় ৬২ দিন হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটলেও, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চট্টগ্রাম বন্দর সফল হয়েছে।