ঢাকা | বঙ্গাব্দ

হরমুজ প্রণালীতে মাইন বসানোর তথ্য পেয়ে উদ্বেগে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 2, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

ইরানের সামরিক বাহিনী গত মাসে পারস্য উপসাগরে তাদের নৌযানে সামুদ্রিক মাইন স্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছিল বলে জানা গেছে, যা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় তেহরান তখন হরমুজ প্রণালী অবরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এই গোপন প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আসে গত ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর। যদিও এখনও ওই মাইনগুলো ব্যবহার করা হয়নি, তবে ইরানের এমন পদক্ষেপ স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে তারা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক জলপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করতে বাস্তব পরিকল্পনা নিয়েছিল। উল্লেখ্য, বিশ্বের মোট তেল ও গ্যাস সরবরাহের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এই পথ দিয়ে যায়।

এরপর ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এই ঘটনার পর ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করলেও সেটি বাধ্যতামূলক ছিল না। এই সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের হাতে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ইরানের এই মাইন স্থাপনের প্রস্তুতির তথ্য পেয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, স্যাটেলাইট নজরদারি, মানব গোয়েন্দা বা উভয়ের সমন্বয়ে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ইরানের এমন প্রস্তুতি হয়তো কৌশলগত বার্তা পাঠানোর উদ্দেশ্যে ছিল, অর্থাৎ তারা সক্ষমতা দেখাতে চেয়েছে, কিন্তু তা বাস্তবে কার্যকর করতে চায়নি। তবে ইরান বহু বছর ধরে হরমুজ প্রণালী বন্ধের সামরিক সক্ষমতা তৈরি করে রেখেছে।

হরমুজ প্রণালী ওমান ও ইরানের মাঝখানে অবস্থিত এবং এটি পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশে এর প্রস্থ মাত্র ২১ মাইল, যেখানে দুই পাশেই মাত্র ২ মাইল চওড়া নৌ-চলাচলের পথ নির্ধারিত।

বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই পথ দিয়ে সৌদি আরব, আমিরাত, কুয়েত, ইরাক ও কাতারের বিশাল পরিমাণ তেল ও গ্যাস রপ্তানি হয়। এমনকি ইরান নিজেও এই পথ ব্যবহার করে তেল রপ্তানি করে থাকে। তাই হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে ইরানও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবুও তারা দীর্ঘদিন ধরে এই জলপথ অবরোধের সক্ষমতা ধরে রেখেছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সহায়তা চেয়ে তেহরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যেন হরমুজ প্রণালী সব সময় খোলা রাখা হয়। হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'অপারেশন মিডনাইট হ্যামার' ও হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সফল অভিযানের কারণে এখন ওই জলপথ উন্মুক্ত রয়েছে এবং সেখানে নিরাপদ নৌ-চলাচল নিশ্চিত করা হয়েছে।

২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের কাছে পাঁচ হাজারের বেশি সামুদ্রিক মাইন রয়েছে, যা তারা ছোট ও দ্রুতগামী নৌযানের মাধ্যমে সহজেই স্থাপন করতে পারে। বাহরাইনের মার্কিন নৌঘাঁটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পঞ্চম নৌবহর এ অঞ্চলেই বাণিজ্যিক নিরাপত্তা রক্ষার মূল দায়িত্ব পালন করে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে সম্ভাব্য প্রতিশোধের আশঙ্কায় বাহরাইন থেকে মাইন-পরিষ্কারকারী জাহাজও সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স