ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ওহি লিপিবদ্ধকারীর সংখ্যা, সর্বপ্রথম কে লিখেছেন?

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 3, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

মহানবী (সা.) ছিলেন শিক্ষা সম্প্রসারণে অত্যন্ত দূরদর্শী। তাঁর শিক্ষাবান্ধব নীতির কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই লেখালেখিতে দক্ষ সাহাবিদের একটি দল গড়ে ওঠে। নবীজি (সা.) এর জীবদ্দশায় যারা ওহি লিপিবদ্ধ করতেন, তাঁদের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি ছিল।

কেউ নির্দিষ্ট সময় বা বিশেষ পরিস্থিতিতে লিখতেন, আবার কেউ পুরোপুরিভাবে এই দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন এবং লেখালেখিতে পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। তাঁরা নবী (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। খেজুর গাছের শুকনো ডাল, পাথর, চামড়ার টুকরো এবং হাড়ের পাতের মতো উপকরণে ওহি লিখে রাখতেন। পরবর্তীতে কাগজ ব্যবহারের শুরু হওয়ায়, এসব ওহির পাণ্ডুলিপি যত্নসহকারে নবীর ঘরে সংরক্ষিত হতো। নতুন কোনো আয়াত অবতীর্ণ হলেই নবীজি (সা.) তা বিশ্বস্ত সাহাবিদের লিখে রাখার নির্দেশ দিতেন। তিনি বলতেন, ‘এই আয়াতগুলো সেই সুরার নির্দিষ্ট স্থানে লিখে রাখো, যেখানে পূর্বে বিষয়টি উল্লেখ আছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৭৮৬)

এটি ছিল আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যেখানে সতর্কতার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখা হতো। এই সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত পদ্ধতির মাধ্যমে কোরআন ধাপে ধাপে সংকলিত হয় এবং প্রতিটি শব্দ সুসংহতভাবে সংরক্ষিত হয়।

ওহি লিপিবদ্ধকারীদের সংখ্যা নিয়ে ইসলামী জীবনীকারদের মধ্যে কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ সংখ্যাটি ১৩ উল্লেখ করেছেন, আবার কেউ ২০-এরও বেশি বলেছেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) তাঁর গ্রন্থ ‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’তে ২৩ জন ওহি লেখকের নাম উল্লেখ করেছেন এবং তাঁদের সংক্ষিপ্ত জীবনীও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওহি সংরক্ষণের দায়িত্বে প্রথমেই ছিলেন চার খলিফা—আবু বকর, উমর, উসমান ও আলী (রা.)। এরপর উল্লেখ করেছেন আবান ইবনে সাঈদ ইবনে আস, উবাই ইবনে কাব, জায়েদ ইবনে সাবিত, মুআজ ইবনে জাবাল, আরকাম ইবনে আবি আরকাম (আসল নাম আবদে মানাফ), সাবিত ইবনে কায়স ইবনে শামাস, হানজালা ইবনে রাবি‘, খালিদ ইবনে আল-ওয়ালিদ, জুবাইর ইবনে আল-আওয়াম, আবদুল্লাহ ইবনে আবি সারাহ, আমির ইবনে ফুহাইরা, আবদুল্লাহ ইবনে আরকাম, আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ, আল-আলা ইবনে আল-হাদরামি, মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা, মুআবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান প্রমুখ।

মক্কায় অবস্থানকালে প্রথম ওহি লিপিবদ্ধকারী ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে আবি সারাহ (রা.)। আর মদিনায় হিজরত করার পর নবী (সা.)-এর সামনে প্রথম ওহি লিখে রাখার সৌভাগ্য অর্জন করেন উবাই ইবনে কাব (রা.)। এত সংখ্যক সাহাবির দ্বারা ওহি লিপিবদ্ধ হওয়ায় স্পষ্ট হয় যে নবীজি (সা.) শুধু ওহি সংরক্ষণই করেননি, বরং তাঁর প্রেরিত চিঠিপত্র, রাষ্ট্রীয় ঘোষণা, চুক্তিপত্র ও প্রশাসনিক নির্দেশনাও লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করতেন।

ওহি লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান ও মর্যাদাপূর্ণ ছিলেন জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.)। তাঁকে শুধু একজন লেখকই নয়, বরং ওহি লিপিবদ্ধকারীদের ইমাম ও নেতা হিসেবে গণ্য করা হতো। সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, যখন ‘মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে এবং যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে, তারা সমান নয়’ এই আয়াত অবতীর্ণ হয়, তখন নবীজি (সা.) জায়েদকে ডেকে এনে লিখতে বলেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৫৯২)। এই নির্দেশনা প্রমাণ করে যে জায়েদ (রা.) সরাসরি নবীর আদেশে কাজ করতেন। এছাড়াও, আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.) কোরআন সংকলনের মতো গুরুদায়িত্বপূর্ণ কাজে জায়েদ (রা.)-কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

এইভাবে মহানবী (সা.)-এর দিকনির্দেশনায় ওহি সংরক্ষণ ও লিপিবদ্ধকরণ একটি সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা কোরআনের ঐশী গ্রন্থ হিসেবে চিরস্থায়ী সংরক্ষণের জন্য পথপ্রদর্শক হয়।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স