শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঠিক বয়স সম্পর্কে নবী করিম (সা.)-এর একটি হাদিস থেকে জানা যায়, সাত বছর থেকে শিক্ষাদান শুরু করা উচিত। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)। অর্থাৎ নামাজ যদিও বালেগ হওয়ার পর ফরজ হলেও, শিক্ষাদান শুরু করতে হবে সাত বছর থেকেই।
তবে এ ব্যাপারে সময় বিলম্ব করা ঠিক নয়, আবার অতিরিক্ত চাপ দেওয়া ও ঠিক নয়। তবে কোরআনের তিলাওয়াত শিক্ষা শিশুর বয়স যতই কম হোক, ব্রেনে কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। আল্লাহ তা’আলা নিজেই এটি সহজ করে দিয়েছেন।
অনেকে শৈশবে প্রয়োজনীয় দ্বینی জ্ঞান নিতে পারে না, এতে হীনমন্যতা জন্মায়। কিন্তু ইসলাম শিক্ষা দেয় যে বয়স কখনোই জ্ঞান অর্জনের বাধা নয়। মুসলিম মনীষীরা অনেকেই প্রাপ্তবয়স্ক বয়সে দ্বীনী জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করেছেন।
আল্লামা সুয়ুতি (রহ.) বলেছেন, কিছু আলেম মনে করেন হাদিস শ্রবণ শুরু হওয়া উচিত ৩০ বছর থেকে। কারণ পরিণত বয়সে নিজস্ব ইচ্ছা ও দৃঢ় সংকল্প থেকে ধর্মীয় জ্ঞান গ্রহণ করা সহজ হয়।
ইসলাম গ্রহণকারী অনেক সাহাবি ছিলেন প্রাপ্তবয়স্ক, যারা ইলম অর্জনে বয়সকে বাধা হতে দেননি। যেমন আবু বকর (রা.) প্রায় ৪০ বছর বয়সে, উমর (রা.) ৩০ বছর বয়সে দ্বীনী ইলম শিক্ষা শুরু করেছিলেন। ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, ‘বয়স বেশি হওয়ার আগেই ইলম শিখে নাও, আর বয়স বেশি হওয়ার পরও শেখো। সাহাবায়ে কেরামের অধিকাংশই বয়স বেশি হওয়ার পর দ্বিন শিক্ষা অর্জন করেছেন।’ (সহিহ বুখারি)
বয়স্ক বয়সে দ্বিন শিক্ষা নেওয়ার কিছু সফল উদাহরণ রয়েছে। আল্লামা ইবনে হাজম (রহ.) ২৬ বছর বয়সে ইলম অর্জন শুরু করেন, যা তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বাঁক ছিল। এছাড়াও আবু বকর আল-কাফফাল (রহ.) ও আবু আবদুল্লাহ আসবাগ ইবনুল ফারজ (রহ.) প্রাপ্তবয়স্ক বয়সে দ্বিন শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
যদিও বয়স্ক বয়সে শিক্ষার কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে, যেমন স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, সময়ের অভাব, সংসার ও উপার্জনের দায়ভার, তবুও ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম থাকলে আল্লাহ তা’আলা শিক্ষার পথ সুগম করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার পথে সংগ্রাম করে আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয়ই আল্লাহ সতকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৯)।
সুতরাং, বয়স কখনোই দ্বিনী জ্ঞান অর্জনের বাধা হতে পারে না। প্রার্থনা, অধ্যবসায় ও বিশ্বাস থাকলেই শিক্ষা লাভ সম্ভব।