চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা জুলাই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বর্তমান সংবিধান বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির মত ভিন্ন। তাদের দাবি, এই ঘোষণাপত্র সংবিধানের অংশ নয়, বরং এটিকে ‘রাজনৈতিক দলিল’ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ছাত্রনেতারা জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই দায়িত্ব নেয় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি খসড়া পাঠায়।
সরকারের ওই তিন পাতার খসড়ায় উল্লেখ করা হয় জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, বর্তমান সংবিধান, ১/১১ ষড়যন্ত্র, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনকাল এবং স্বাধীনতার ইতিহাস। একইসঙ্গে সেখানে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিকল্পনার কথাও উঠে আসে।
বিএনপি তাদের প্রতিক্রিয়ায় খসড়া ঘোষণাপত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে রাখার প্রস্তাব দেয়। একই সঙ্গে ৭ নভেম্বরের বিপ্লব, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ৫ আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ যুক্ত করার দাবি জানায়। পাশাপাশি, দলটি স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, জুলাই ঘোষণাপত্রকে তারা সংবিধানের অংশ হিসেবে নয়, রাজনৈতিক দলিল হিসেবে দেখতে চায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা ঘোষণাপত্রে দেশের মহান স্বাধীনতা, ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবস, ’৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ৫ আগস্টের ছাত্র অভ্যুত্থানকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে জুলাই ঘোষণাপত্রের কোনো সাংবিধানিক বা আইনি গুরুত্ব নেই। এটি নিছক একটি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক দলিল, যা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। রাজনীতিতে আবেগের জায়গা সীমিত, এটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিএনপির এই অবস্থানে সমর্থন দিয়েছেন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই জনগণের দাবি ও অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে হয়েছে। সে কারণে একটি ন্যায্যতা ও স্বীকৃতির প্রশ্ন থেকেই এই ঘোষণাপত্র এসেছে। ভবিষ্যতে এটি নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হতে পারে, তখন সিদ্ধান্ত হবে এর সাংবিধানিক মর্যাদা নিয়ে।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমদ বলেন, যদি জুলাই ঘোষণাপত্রকে জাতীয় সনদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তাহলে অতীতের বিভিন্ন আন্দোলনের ঘোষণাপত্রও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে সেটিকেই বাস্তবসম্মত মনে করি।
সবশেষে, রাজনৈতিক দলগুলো মনে করছে, ঘোষণাপত্র জারির দায়িত্ব সরকারের। কোনো দল এককভাবে ঘোষণাপত্র দিলেই তা জাতীয় ঐকমত্যের প্রতিফলন হবে না। এজন্য প্রয়োজন সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।