বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রেষণে থাকা কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে গুমে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সেনা সদর দপ্তর। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে সেনা সদরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সামরিক অপারেশনস পরিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রেষণে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা যে সব সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেন, সেগুলো সরাসরি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ এসেছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মব ভায়োলেন্স বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। এ বিষয়ে কর্নেল শফিকুল ইসলাম জানান, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লাঞ্ছনার ঘটনায় শনাক্ত হওয়া ৬ জনের একজনকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। জামিন পাওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর সেনাবাহিনীর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তবে ভবিষ্যতেও যেকোনো জনদুর্ভোগ বা সহিংসতার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রামের পটিয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনীর তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবরোধ তুলে জনদুর্ভোগ কমায়। এমন উদ্যোগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া, কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে নারী নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সেনাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। ওই ঘটনার মূল আসামি ফজর আলীসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় সেনাবাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন একটি রাষ্ট্রীয় বিষয়। নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেলে সেনাবাহিনী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সহযোগিতা করবে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে লুট হওয়া ৮০ শতাংশ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে, যা নির্বাচনের নিরাপত্তায় সহায়ক হবে।
সেনা সদর জানায়, গত দুই সপ্তাহে সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে ২৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৬৯২টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৪টি গুলি উদ্ধার এবং ১৫ হাজার ৬৪৬ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, ডাকাত ও মাদক সংশ্লিষ্টরা রয়েছে। মাদক সংশ্লিষ্ট অভিযোগে ৫ হাজার ৫২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে গত দুই সপ্তাহে ১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইউপিডিএফের একটি ক্যাম্প ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযানে একজন সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ অভিযান কার্যকর হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এর ফলে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ভয়ে পালিয়ে যাওয়া বান্দরবানের ১৩৮ জন বম সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। সেনাবাহিনী তাদের সহায়তা করছে।
এছাড়া, পার্বত্য চট্টগ্রামে কেএনএফের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে সংগঠনটির দুজন সদস্য নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে সেনাবাহিনী ও কেএনএফের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এতে কেএনএফের একজন ‘মেজর’ পদবীর কমান্ডার নিহত হন। অভিযানে তিনটি অত্যাধুনিক এসএমজি, একটি চায়নিজ রাইফেল, ৩৬৪ রাউন্ড গুলি ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা।