ঢাকা | বঙ্গাব্দ

মেটিকুলাস ডিজাইনে সমস্যা কোথায়— উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের প্রশ্ন

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 5, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের প্রশ্ন—‘পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে যদি মেটিকুলাস পরিকল্পনা করে আগরতলা ষড়যন্ত্র, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলন ও বাঙালি-বিহারি দাঙ্গা সঠিক হতে পারে, তাহলে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান মেটিকুলাস পরিকল্পনায় এগোলেই বা সমস্যা কোথায়?’

গতকাল শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এই মন্তব্য করেন।

তিনি লেখেন, ‘বিশ্বের ইতিহাসে কোনো বিপ্লব, আন্দোলন বা অভ্যুত্থান কি পরিকল্পনা ছাড়া হয়েছে? জনগণের চেতনা, ঐক্য ও লক্ষ্যকে সুনির্দিষ্ট পথে এগিয়ে নিতে মেটিকুলাস পরিকল্পনার বিকল্প নেই। যখন জনগণ সঠিক নেতৃত্ব ও বক্তব্য পেয়ে যায় এবং বিপ্লবের বাস্তব অবস্থা তৈরি হয়, তখন আর বাড়তি পরিকল্পনার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তার আগে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত করা, সংগঠিত করা এবং বিপ্লবের জন্য তৈরি করা— এটাই মেটিকুলাস পরিকল্পনা। এতে সমস্যা কোথায়?’

মাহফুজ আলম তার স্ট্যাটাসে আরও বলেন, ‘সিরাজুল আলম খান, তাজউদ্দিন আহমদ, সিরাজ শিকদার, মওলানা ভাসানী বা খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানকে পরাজিত করতে মেটিকুলাস পরিকল্পনার অংশ হয়েছেন বলে যদি আমাদের কারও মনে ক্ষোভ বা অপরাধবোধ না থাকে, বরং আমরা তাদের নিয়ে গর্বিত হই, তাহলে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে মেটিকুলাস পরিকল্পনার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হলে এ প্রজন্ম কেন গর্বিত হবে না?’

তথ্য উপদেষ্টা দাবি করেন, ‘৩ আগস্টের একদফা ঘোষণার আগে পর্যন্ত এই গণঅভ্যুত্থানে কোনো বিদেশি শক্তি, তৃতীয় পক্ষ বা সামরিক বাহিনীর বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা ছিল না। যদি ভারতসহ বিভিন্ন পক্ষের সাথে ন্যায্য ষড়যন্ত্র করে আগরতলা বৈঠকের মাধ্যমে স্বাধীনতার পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারি এবং তাতে নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পারি, তাহলে কোনো বিদেশি শক্তি ছাড়াই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই অভ্যুত্থান বাস্তবায়ন হলে, সেই নেতৃত্ব বা অংশগ্রহণকারীদের গালি কেন শুনতে হবে?’

পুনশ্চ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ধাপ ৫ জুন থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত, যেখানে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও নেতৃত্ব তৈরির কাজ হয়। দ্বিতীয় ধাপ ১৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত, যেখানে ছাত্র-জনতার সক্রিয় অংশগ্রহণ, আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে অভ্যুত্থান সফল হয়। প্রথম অংশ ছিল পরিকল্পিত, দ্বিতীয় অংশ ছিল বিপ্লবী ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যমের ফল। তবে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও বক্তব্য ছাড়া ছাত্র-জনতা ওই সফলতা অর্জন করতে পারত না।’

তিনি আরও লেখেন, ‘২ আগস্ট রাতে এই অভ্যুত্থান সামরিক হস্তক্ষেপের দিকে মোড় নিতে পারত। কিন্তু নেতৃত্বের বিচক্ষণতায় সেটি প্রতিহত হয়।’

সবশেষে মাহফুজ আলম বলেন, ‘মওলানা ভাসানীর ’৬৮ সালের ঘেরাও আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭১ সালের মার্চের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে—মেটিকুলাস পরিকল্পনা ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ একে অন্যের পরিপূরক। পরিকল্পনা ছাড়া বিদ্রোহ সফল হয় না, আবার জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া পরিকল্পনা অর্থহীন।’


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স