ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ে এই চুক্তি সম্পন্ন হয়।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সভাপতি নেজমেদ্দিন বিলাল এরদোয়ান নিজ নিজ পক্ষে এই চুক্তিতে সই করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এমওইউ স্বাক্ষরের পূর্বে উভয় পক্ষ আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে তারা সভ্যতা ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ করতে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন এবং দেশীয় খেলাধুলা প্রচারে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।
আলোচনায় বিলাল এরদোয়ান বাংলাদেশের কাবাডি, কুস্তি, বলিখেলা ও নৌকা বাইচের মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর ব্যাপক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী এসব খেলাধুলার প্রচারে গভীর আগ্রহ ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে তাদের সংগঠনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আগ্রহও প্রকাশ করেন।
তুরস্কে তার শিক্ষামূলক কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এরদোয়ান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি, শিক্ষা বিনিময় ও বিষয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতার প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে তাদের একটি স্কুল স্থাপনের আগ্রহ জানান। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা আয়োজনে সহায়তার কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, যাতে খেলাধুলার মাধ্যমে শরণার্থীদের কষ্ট কিছুটা কমানো যায়।
তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে দেশের সাংস্কৃতিক মর্যাদা ও বৈশ্বিক অবস্থান পুনরুদ্ধারে যেসব প্রয়াস চলছে তার প্রশংসা করেন এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে তরুণ সমাজ ও সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশ তার প্রকৃত ও বিশ্বস্ত অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে কাজ করছে, যেখানে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। তিনি বলেন, ইতিহাসের সংকটময় সময়ে তুরস্ক সর্বদা বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের জনগণের পাশে থেকেছে। এই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের তরুণ সমাজে রাজনৈতিক সচেতনতা ও সভ্যতাগত পরিবর্তনের আগ্রহ জাগিয়েছে, যা তুরস্কের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবনের মতো।
উপদেষ্টা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান ও বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিম জনগণের প্রতি তার সমর্থনের প্রশংসা করেন। তিনি বললেন, এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক জোট গঠন করা প্রয়োজন এবং বাংলাদেশ এ কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে।
আসিফ মাহমুদ বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো যেমন কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, বলিখেলা, কুস্তি ও নৌকা বাইচের আন্তর্জাতিকীকরণে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠকের শেষে তিনি নেজমেদ্দিন বিলাল এরদোয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৫ সালের গ্লোবাল ইয়ুথ সামিটে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এই সফর উভয় দেশের যুব ও ক্রীড়া খাতের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও মজবুত ও গতিশীল করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।