ভারতে অ্যাপলের পণ্য সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান ফক্সকন থেকে শত শত চীনা কর্মীকে দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে চীনের শি জিনপিং সরকারের। ইতোমধ্যে ৩০০ জনের বেশি কর্মী ভারত ছেড়ে চীনে ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। এ কারণে দক্ষিণ ভারতের কারখানাগুলোতে অ্যাপল পণ্যের উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের ফক্সকন কারখানাগুলোর বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ মান নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন বিভাগের পদে চীনা কর্মীরা কাজ করতেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই কর্মীদের প্রত্যাহারের ফলে আইফোনের উৎপাদনে বিলম্ব ও খরচ বৃদ্ধি হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুতে চীন সরকার স্থানীয় প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি স্থানান্তর সীমিত করার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, অ্যাপলের উৎপাদন চীন থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রবণতাকে ঠেকানোর জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো ফক্সকন বা অ্যাপলের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ভারতের ফক্সকন কারখানায় প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি আইফোন সংযোজন করা হয়, যা অ্যাপলের মোট বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের প্রায় ১৫ শতাংশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য নির্ধারিত সব আইফোন ভারতে তৈরি হবে।
টাটা গ্রুপ ইতোমধ্যে উইস্ট্রন ও পেগাট্রনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অ্যাপলের দ্বিতীয় বৃহত্তম যোগানদাতা হিসেবে উঠে এসেছে। তবে এই সময় চীনা কর্মীদের প্রত্যাহার শুরু হওয়ায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ধীরগতি এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
চীনা কর্মীরা কেবল দক্ষই ছিলেন না, তারা প্রযুক্তি স্থানান্তর ও স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। তাদের প্রত্যাবর্তনের ফলে ভারতে প্রশিক্ষণের গতি কমে যেতে পারে।
এক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এনডিটিভিকে বলেন, “উৎপাদনের গুণগত মানে তেমন প্রভাব পড়বে না, তবে অ্যাসেম্বলি লাইনের গতি ধীর হতে পারে।” অ্যাপলের সিইও টিম কুকও একাধিকবার চীনা শ্রমিকদের দক্ষতার প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, “আমাদের উৎপাদনের ভিত্তি চীনেই গড়ে উঠেছে, যা মূলত তাদের দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ চীন-ভারত প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার একটি প্রতিফলন।