একজন মুমিন মা-বাবার অন্যতম প্রত্যাশা হলো, তাঁদের সন্তান যেন দ্বিনদার হয়। সে যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সা.) আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী জীবনযাপন করে এবং কখনো তাঁদের অবাধ্য না হয়। এজন্য সচেতন মা-বাবা সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, যা তাদের ঈমানের দায়িত্বও বটে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম জাওজিয়া (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার সন্তানের কল্যাণকর শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে উদাসীন থাকে এবং কোনো চেষ্টা করে না, সে তার সন্তানের প্রতি বড় জুলুম করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অধিকাংশ সন্তানের চরিত্র ও জীবন নষ্ট হওয়ার মূল কারণ হলো বাবা-মায়ের অবহেলা, ভুল সিদ্ধান্ত এবং ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি উদাসীনতা। ফলে সন্তানের জীবন বিপথে যায় এবং শেষ বয়সে তারাই বাবা-মা থেকে দূরে সরে যায়।’ (তুহফাতুল মাওলুদ, পৃষ্ঠা: ২২৯)
সন্তানকে দ্বিনদার করতে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:
১. সৎ বন্ধু নির্বাচন: সন্তানের জন্য এমন বন্ধু বাছাই করুন, যার পরিবারও সন্তানকে দ্বিনের পথে গড়ে তুলতে আগ্রহী। হাদিসে বলা হয়েছে, উত্তম ও খারাপ সঙ্গীর উদাহরণ আতর বিক্রেতা ও কামার-কর্মকারের মতো। আতর বিক্রেতার কাছ থেকে সুঘ্রাণ বা উপকার পাবেন আর কামারের কাছ থেকে আগুন বা দুর্গন্ধ।
২. মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া: শিশুকে নিয়মিত মসজিদে নিয়ে যান। এতে তার মনে নামাজের গুরুত্ব বাড়বে, নিয়মানুবর্তিতা আসবে এবং দ্বিনপালনে আগ্রহী মানুষের সঙ্গ পাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যাদের অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেপ্টে থাকে, কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে।’
৩. কোরআনের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি: শিশুদের জন্য সুন্দর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত শোনান। এতে তাদের মনে কোরআনের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে এবং তারা দ্বিনে অগ্রসর হবে।
৪. খেলাধুলায় ইসলামী ভাবধারা: শিশুর খেলাধুলার জিনিসপত্র যেন ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। প্রয়োজন হলে ইসলামিক কার্টুন বা শিক্ষামূলক ভিডিও দেখতে উৎসাহিত করুন।
৫. ইসলামী বই পড়ার অভ্যাস: শিশুদের জন্য সহজবোধ্য ইসলামী বই, সাহাবিদের জীবন, নবী-রাসুলদের কাহিনি পড়ার ব্যবস্থা করুন। গল্পের মাধ্যমে তাদেরকে ইসলামের ইতিহাস ও শিক্ষা দিন।
৬. ইসলামের মৌলিক শিক্ষা: বয়স অনুযায়ী সালাত, রোজা, হালাল-হারাম, আদব-আখলাকসহ ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো শেখান।
৭. দ্বিনি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিন: সন্তানকে দ্বিনি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান। দ্বিনি শিক্ষা ছাড়া জাগতিক শিক্ষা কখনো পূর্ণতা পায় না।
৮. ওমরাহ বা ইসলামী ভ্রমণ: সামর্থ্য থাকলে সন্তানকে নিয়ে ওমরাহ করুন। শিশুদের মনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং ইসলামের প্রতি ভালোবাসা বাড়ে।
৯. সন্তানের জন্য দোয়া করুন: সন্তানের দ্বিনদার হওয়ার জন্য নিয়মিত আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যেমন ইবরাহিম (আ.) তাঁর জন্য করেছিলেন।
১০. নিজেই আদর্শ হোন: সন্তানেরা যা দেখে, তা-ই শিখে। তাই মা-বাবা নিজেরাই দ্বিনদার জীবনযাপন করুন। সন্তানদের সামনে উত্তম চরিত্রের উদাহরণ দিন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সন্তানদের দ্বিনের পথে পরিচালিত করুন এবং আমাদের জন্য নয়ন জুড়ানো সন্তানের ব্যবস্থা করুন। আমিন।