ঢাকা | বঙ্গাব্দ

রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ পেতে অপেক্ষা বাড়লো

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 5, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত হলেও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে এখনই যুক্ত হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত দুই বছরের সময় দেওয়া হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ পেতে আরও দেরি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় প্রকল্পের সময়সীমা বাড়াতে হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূল চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ইউনিটের কাজ ২০২৩ সালের অক্টোবর এবং দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ইউনিটের কাজ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে গত ২০ জুন রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যন্ত্রপাতি সরবরাহে বিলম্ব এবং বিশেষজ্ঞদের যাতায়াতে জটিলতার কারণে কাজ পিছিয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত অর্থ সময়মতো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।

পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় একক অবকাঠামোগত প্রকল্প। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এটি বাস্তবায়ন করছে। রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় নির্মিত এ প্রকল্পে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট থাকবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট মূল ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে।

প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত রাশিয়া-বাংলাদেশ যৌথ সমন্বয় কমিটির বৈঠকে হয়। তবে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হতে সময় লেগেছে। শুরুতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দেড় বছরের সময় বাড়ানোর অনুমোদন দিলেও রুশ ঠিকাদার এতে রাজি হয়নি। পরে আরও ছয় মাস বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, কারিগরি বিবেচনায় আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।

চুক্তি অনুযায়ী, সময় বাড়লেও ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ নেই। তবে প্রকল্পের উৎপাদন শুরু না হওয়ায় সরকারকে পরিচালন ব্যয় বহন করতে হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দেবে।

প্রকল্প পরিচালক মো. কবীর হোসেন জানান, বর্তমানে কাজ স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছে। অতীতে মহামারি ও যুদ্ধের কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে, সে কারণে সময় বাড়াতে হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী বছর থেকেই ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।

প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে সঞ্চালন লাইন সম্পন্ন না হওয়াকে দেখানো হয়। তবে ২ জুন পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ সঞ্চালন লাইন চালু করে। তখন বলা হয়, দু-তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে উৎপাদন শুরু হতে পারে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে গত বছরের আগস্টের পর কাজের গতি কমেছে। চুল্লিপাত্রে পারমাণবিক জ্বালানি ঢুকাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর শুরু হবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি ঢোকানোর পর অন্তত ছয় মাস ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা ও আন্তর্জাতিক অনুমোদন নিতে হবে। ফলে আগামী বছরের জুনের আগে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, সঞ্চালন লাইনের সমস্যা ছিল অজুহাত মাত্র। বিকল্প গ্রিড আগেই প্রস্তুত ছিল। প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত হয়নি। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব এবং খরচ বাড়ছে। ১০ বছরের বেশি সময় লাগলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ আরও বেড়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স