ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট সমর্থনও হারিয়েছেন স্বঘোষিত ‘ক্রাউন প্রিন্স’ পাহলভি

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 5, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন ইরানের শেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পুত্র ও নির্বাসিত যুবরাজ রেজা পাহলভি। ৬৪ বছর বয়সী এ স্বঘোষিত ‘ক্রাউন প্রিন্স’ যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান, যেন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় ফিরে গিয়ে ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে জীবনদান’ না দেওয়া হয়।

পাহলভি দাবি করেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পতন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তিনি বলেন, ‘এটাই আমাদের বার্লিন ওয়াল মুহূর্ত।’

ইসরায়েলের হামলাকে তিনি ‘সুযোগ’ হিসেবে উল্লেখ করে ইরানিদের রাস্তায় নামার ও সামরিক বাহিনীতে ভাঙনের আহ্বান জানান। তবে তার ডাকে সাড়া পায়নি কেউ। বরং বিদেশি হামলার মুখে সরকারবিরোধীরাও জাতীয় পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় চুপ থাকার কারণে পাহলভি তার অবশিষ্ট সমর্থন হারিয়েছেন।

ইরান বিশেষজ্ঞ ত্রিতা পার্সি বলেন, ‘তিনি আসলে তার পরিবারের নাম ও ভাবমূর্তি ধ্বংস করেছেন। যখন ইসরায়েল আমাদের বাড়িতে বোমা ফেলছে, তখন তিনি তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।’

পাহলভির প্রতি সীমিত সমর্থন মূলত ইসলামি প্রজাতন্ত্রবিরোধিতা এবং ১৯৭৯ সালের পূর্ববর্তী শাহ শাসনের নস্টালজিয়া থেকে আসে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাহলভির পরিবারকে ঘিরে স্মৃতিতে ঐতিহাসিক নির্মমতা ও স্বৈরশাসনের দিকগুলো উপেক্ষিত হচ্ছে।

শাহ আমলে ইরানে ছিল ব্যাপক অস্থিরতা, দারিদ্র্য এবং রাজনৈতিক দমনপীড়ন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ১৯৭৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহর গোয়েন্দা সংস্থা ‘সাভাক’ রাজনৈতিক বন্দিদের বৈদ্যুতিক শক, যৌন নির্যাতন এবং নখ তুলে ফেলার মতো ভয়াবহ নির্যাতন করত।

২০২৩ সালে রেজা পাহলভি এক নাটকীয় সফরে ইসরায়েলে যান। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ছবি তোলেন, কিন্তু মুসলমানদের পবিত্র আল-আকসা মসজিদে যাননি—যা ইরানিদের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়।

এই সফর এবং ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাত তাকে ইরানিদের কাছে আরও অজনপ্রিয় করে তোলে, বিশেষ করে যাদের পরিবার যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছে।

তার ‘ইরানি জাতীয়তাবাদী’ পরিচয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের রক্ষণশীল থিংক ট্যাংকগুলোর ঘনিষ্ঠতাও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

২০২৩ সালে পাহলভি একগুচ্ছ সরকারবিরোধী ব্যক্তিকে নিয়ে একটি জোট গঠনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ওয়াশিংটনের এক বৈঠকে তিনি অন্যদের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে নিজেকে একক নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করলে জোট ভেঙে যায়।

ইরানের ইতিহাসবিদ আসাল রাদ বলেন, পাহলভি পরিবার সবসময়ই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ইরান সাম্রাজ্যের ২৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া ভুয়া সম্রাটীয় পার্টি ছিল বিচ্ছিন্নতার এক প্রতীক।’

দীর্ঘ নির্বাসনের কারণে ইরানিরা পাহলভির সঙ্গে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলের হামলার সময় তার নীরবতা ও বিদ্রোহের আহ্বান অনেকের কাছে ‘নিজস্ব ক্ষমতার জন্য অন্যদের জীবন বাজি ধরার চেষ্টা’ হিসেবে দেখা হয়েছে।

ত্রিতা পার্সির মতে, ‘ইসরায়েলের কাছে তিনি শুধু একটি প্রতীক মাত্র, যাকে দেখিয়ে বলা হয় “ইরানিরা চায় তাদের উপর বোমা বর্ষিত হোক।” কিন্তু বাস্তবে, ইরানিরা তা চায় না, এমনকি যারা সরকারের বিরোধী তারাও।’


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স