ঢাকা | বঙ্গাব্দ

চীনা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এক রহস্যময় ‘জেনেটিক সুইচ’

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 5, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

ভাবুন তো, শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে সেটা আবার আগের মতো গজিয়ে উঠছে! মনে হতে পারে কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি। কিন্তু এখন সেটা বাস্তবের দিকে এগোচ্ছে। যদিও এটি এখনো শুধু গবেষণাগারের পর্যায়ে রয়েছে এবং পরীক্ষামূলকভাবে ইঁদুরের দেহে সফলতা এসেছে। মানুষের ওপর প্রয়োগ হতে সময় লাগবে।

চীনের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক যুগান্তকারী গবেষণায় দেখিয়েছেন, ইঁদুরের কানে ক্ষতস্থান পুনরায় গজানোর রহস্য লুকিয়ে আছে এক বিশেষ ‘জেনেটিক সুইচ’-এর ভেতর। তারা সেটি সক্রিয় করে দেখিয়েছেন, অঙ্গ পুনর্জন্ম কোনো কল্পনা নয়, বরং ভবিষ্যতে বাস্তবের সম্ভাবনা।

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ইঁদুরের কানের ফুটো জায়গা আবার পূর্ণ হয়ে উঠেছে, এমনকি ভেতরের জটিল কার্টিলেজও ঠিকঠাক তৈরি হয়েছে। এর আগে এমন কোনো সফলতা পাওয়া যায়নি।

গবেষণার অন্যতম বিজ্ঞানী ওয়াং ওয়ে, যিনি বেইজিংয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের সহকারী গবেষক, তিনি জানান, “আমরা খুঁজছিলাম, কীভাবে ইঁদুররা বিবর্তনের ধাপে অঙ্গ পুনর্জন্মের ক্ষমতা হারিয়েছে। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো জৈবিক কারণ আছে।”

গবেষণা বলছে, এই পুনর্জন্মের চাবিকাঠি হলো ‘রেটিনয়িক অ্যাসিড’ নামের এক রাসায়নিক, যা ভিটামিন-এ থেকে তৈরি হয়। এটি শরীরের কোষকে নির্দেশ দেয় কোন জায়গায় নতুন টিস্যু তৈরি হবে। এই রাসায়নিক তৈরির জন্য নির্দিষ্ট একটি জিন কাজ করে।

ওয়াং ও তার দল দীর্ঘ তিন বছর ধরে একের পর এক জিন পরীক্ষা করেছেন। অনেকে ক্ষেত্রে কিছু জিন ক্ষত আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। তবুও তারা থেমে থাকেননি। অবশেষে তারা সেই কাঙ্ক্ষিত জিনের সন্ধান পান, যা রেটিনয়িক অ্যাসিড তৈরির কৌশল জানে।

ওয়াং বলেন, “মাত্র একটি জিন এত বড় পরিবর্তন আনতে পারে, সেটা দেখে আমরা অভিভূত।”

এ গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে অভিনব প্রযুক্তি ‘স্টেরিও-সিক’, যাকে বলা হচ্ছে ‘জীবনের ক্যামেরা’। এটি শুধু কোষের ছবি তোলে না, বরং পর্যবেক্ষণ করে কোন জিন কখন, কীভাবে কাজ করছে।

সহ-গবেষক ডেং জিচিং, যিনি বিজিআই রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী, বলেন, “স্টেরিও-সিক আমাদের পুরো দৃশ্যটা খুলে দিয়েছে। এখন আমরা ধাপে ধাপে বুঝতে পারছি, আসলে অঙ্গ পুনর্জন্মের পেছনে কী ঘটছে।”

তবে গবেষকেরা জানিয়েছেন, এখনো অনেক পথ বাকি। মানুষের অঙ্গ ইঁদুরের মতো ছোট নয়, এবং শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন সংকেত ও জটিল প্রক্রিয়া কাজ করে। বিশেষ করে হৃদপিণ্ড, লিভার বা মেরুদণ্ডের মতো জটিল অঙ্গের ক্ষেত্রে এটা অনেক কঠিন কাজ।

তবুও এই গবেষণাকে বিজ্ঞানীরা অঙ্গ পুনর্জন্মের পথে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে দেখছেন।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স