ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ফিরে দেখা ১৬ জুলাই: আবু সাঈদের মৃত্যুতে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ রূপ নেয় স্ফুলিঙ্গে

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jul 16, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

উত্তাল ১৬ জুলাই: কোটা আন্দোলনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ৬ জনের প্রাণহানি ও দেশজুড়ে উত্তেজনা

ঢাকা, ১৬ জুলাই ২০২৪: কোটা আন্দোলন ১৬ জুলাই আরও কঠোর রূপ নেয়। পুলিশের গুলিতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু গোটা দেশকে একতাবদ্ধ করে তোলে, যা সেদিনকে অকুতোভয় রাষ্ট্রের প্রতীকে পরিণত করে। ছাত্রলীগের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ঘুরে দাঁড়ায়, শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এদিন সারাদেশ থেকে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং এইচএসসি পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।


সংঘর্ষ ও বিক্ষোভ: ঢাকা থেকে সারা দেশ

শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা-নিপীড়নের পর ১৬ জুলাই কোটা আন্দোলনের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুপুর থেকেই অবরোধ ও সংঘর্ষ শুরু হয়। সায়েন্সল্যাব মোড়ে কোটার পক্ষে আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সন্ধ্যার দিকে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে এবং আন্দোলনকারীরা পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। এসব ঘটনায় বিকেলে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২ জন নিহতের খবর জানায়। ঢাকা কলেজের সামনে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও (জবি) সংঘর্ষ চলছিল, যেখানে ৪ জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। সেদিনই দেড় শতাধিক আহত শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন। কোটা আন্দোলনকারীদের পদচারণা ও স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় আন্দোলনকারীরা।

এদিকে সারাদেশে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ চলতে থাকে। চট্টগ্রাম, রংপুর, বরিশাল—সব জায়গাতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ৬ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। এরইমধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু সরকার ও প্রশাসনের প্রতি জনগণের বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে দেয়, যা ক্ষোভকে স্ফুলিঙ্গে রূপান্তরিত করে।


গণমাধ্যম ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

অন্যদিকে, বরিশালে সংঘাত চলাকালে যমুনা টেলিভিশনের গাড়ি হামলার শিকার হয়। বগুড়ায় ব্যুরো প্রধান মেহেরুল সুজন আহত হন। চট্টগ্রামে শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ ৩ জন নিহত হন এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যরাতের হামলায় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আহত হন, যার মধ্যে ৫ জন সংবাদকর্মীও ছিলেন।

এদিন বিকেল ৩টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-মিছিলের ঘোষণা দেয়। এর পরপরই ছাত্রলীগ সব শিক্ষাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়, যার ফলে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। পরিস্থিতি নিরসনে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধের ঘোষণা আসে। ওই রাতেই ছাত্রলীগ নেতাদের হলচ্যুত করা হয় এবং কক্ষে কক্ষে ভাঙচুর চলে।


সংহতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এদিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ইউআইইউ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। মোহাম্মদপুরে ছাত্রছাত্রীরা অবরোধ সৃষ্টি করে এবং কোটার যৌক্তিক সংস্কার ও হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে।

এদিকে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে চালানো হামলার প্রতিবাদে বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তারা জানায়, সহিংসতা নতুন মাত্রা পেতে পারে। মার্কিন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের এমন মন্তব্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে। আওয়ামী লীগ নেতারাও আক্রমণাত্মক বক্তব্য অব্যাহত রাখেন।

কোটা আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় সরকার বিনিয়োগ বাতিল করে। এর কারণ জানতে চাইলে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে।

এদিন কোটা আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ছাত্রদল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলও তার বক্তব্যে সরকারের 'পৈশাচিক নির্যাতনের' চিত্র তুলে ধরেন।

আন্দোলনের মেঘ যে ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হচ্ছিল, সেটি মন্ত্রীরা আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই নমনীয়তার বদলে সরকার কঠোর অবস্থানে যায়। বিপরীতে, শিক্ষার্থীরা জীবন বাজি রেখে দাবি আদায়ে সোচ্চার ছিল।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স