ঠাকুরগাঁওয়ে মাদক সেবনে বাধা দেওয়ার কারণে স্ত্রীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় গত ২৪ দিন ধরে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ ইসরাত জাহান সাথী (৩২)। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
ভুক্তভোগী ইসরাত জাহান সাথী সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীহাট বন্দিকার্ডা এলাকার সন্তান। বাবা মৃত, দুই বছর বয়সে অভাবের সংসারের কারণে তাকে শহরের হাজীপাড়া এলাকার ইমাম উদ্দিন-বিলকিস বানু দম্পতিকে দত্তক দেওয়া হয়। এরপর তিনি পালিত মা-বাবার সন্তান হিসেবে বড় হন। ২০১২ সালে তিনি ঠাকুরগাঁও মহিলা কলেজে পড়াকালীন সময়ে বিয়ে করেন। তার ৪ বছরের মেয়ে ও ৯ বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে।
পরবর্তীতে সাথী ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী রুবেল হোসেনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। স্বামী-সন্তান রেখে তিনি পালিয়ে যান এবং পরে পরিবারের জোরে আগের স্বামীর কাছে ফিরে যান। ১৫ দিন সংসার করার পর আবারও জন্মদাতা মায়ের কাছে চলে যান। ২০২২ সালের শেষ দিকে রুবেল হোসেনের সঙ্গে চার বছর প্রেমের পর গোপনে বিয়ে করেন।
প্রথমে সংসার ভালো চললেও কিছুদিনের মধ্যে স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। নিয়মিত ঝগড়া-বিবাদ, মারধর এবং অশান্তি ঘরজুড়ে দেখা দেয়। চলতি মাসের শুরুতে স্বামী মাদক সেবন করলে বাধা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সাথীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। প্রতিবেশীরা চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
২৪ দিন ধরে হাসপাতালে থাকলেও সাথীর স্বামী ও পালিত মা-বাবা কেউ তার খোঁজ নেননি। জন্মদাতা মা একবার এসে সান্তনা না দিয়ে, মৃত্যুর কথা বলে চলে যান। বর্তমানে সাথী মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও অর্থের অভাবে যেতে পারছেন না।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাথী জানান, তিনি দুই বছর বয়স থেকে অন্যের বাড়িতে মানুষ হয়েছেন। বাবা নেই, মা নেই, পালিত মা-বাবাও পাশে নেই। স্বামী মাদকাসক্ত হলেও তিনি ধৈর্য ধরেছিলেন। কিন্তু স্বামী মাদক নেয়ার সময় বাধা দেওয়ায় সে আগুন দিয়েছে। প্রতিবেশীরা না আসলে হয়তো তিনি বেঁচে থাকতে পারতেন না। তিনি আবার হাঁটতে, নিজ হাতে খেতে চাচ্ছেন। তবে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্যালাইন বা চিকিৎসা পাওয়ায় অসুবিধা হচ্ছে।
সাথীর পাশে থাকা নারীরা জানান, তিনি অত্যন্ত অসহায়। হাত অচল হওয়ায় মুখে খাবার তুলে দিতে হচ্ছে। তারা থাকলে খেতে পারছেন, না থাকলে না খেয়ে পড়ে থাকেন। তার দুর্দশা দেখে সবাই মন খারাপ করছেন।
সাথীর পালিত মা বিলকিস বানু অভিযোগের বিষয়ে বলেন, তিনি ২৫ বছর ধরে সাথীকে লালন-পালন করে মানুষ করেছেন। পড়াশোনা করিয়েছেন, বিয়ে দিয়েছেন। তবে সাথী স্বামীর কাছে পালিয়ে গেছে, তাই এই অবস্থার দায় তার ওপর।
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সাথীর দগ্ধ অংশে ইনফেকশন ঠেকাতে বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন। শুধুমাত্র ওষুধ নয়, মানসিক সাপোর্টও জরুরি। জেলা প্রশাসন বা সমাজের বিত্তবান সহযোগিতা করলে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরোয়ারে আলম খান জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও থানায় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা লিগাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. মজনু মিয়া বলেন, নারী নির্যাতনের যে কোনো ঘটনা রাষ্ট্রের জন্য চ্যালেঞ্জ। ভুক্তভোগীরা লিখিত আবেদন করলে সরকারি খরচে বিনা খরচে আইনি সহায়তা, মামলা পরিচালনা, আইনজীবী নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব।
Abdur Rabby
