ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সেই দেশগুলো এখন কী বলছে?

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Nov 3, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন:

পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এখন তারা শুধু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে, “অংশগ্রহণমূলক” শব্দটি এড়িয়ে চলছে। বিপরীতে, ভারত এবার বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন দেখতে চাওয়ার কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থানের এই পার্থক্য দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের আগের অবস্থান থেকে কিছুটা ভিন্নতা প্রকাশ করছে।

নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভারত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু বিএনপির অংশগ্রহণ না থাকায় পশ্চিমারা একে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে মেনে নেয়নি। পরবর্তী একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন নিয়েও পূর্ব ও পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানে স্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়।

সেই সময় নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের সমালোচনার মধ্যেও আওয়ামী লীগ সরকার দাবি করেছিল, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং কোনো দল অংশ নেবে কি না, সেটি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে এখন সেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রমই অন্তর্বর্তী সরকারের আদেশে নিষিদ্ধ। ফলে অনেকে মনে করছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার কারণ হয়তো আওয়ামী লীগকে ঘিরেই।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম স্পষ্ট করেছেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে কোনো দেশীয় বা আন্তর্জাতিক চাপ নেই।

সংস্কার ও মানবাধিকার ইস্যু

পশ্চিমা দেশগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগে দৃঢ় সমর্থন দিচ্ছে এবং একই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপরও জোর দিচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তাদের মৌলিক অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি—তারা বাংলাদেশকে এক ধরনের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে দেখছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন এবং এখনও সেখানেই অবস্থান করছেন। যদিও ঢাকার অনুরোধে নয়াদিল্লি তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সম্প্রতি বলেছেন, ভারত বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রও বলেন, এমন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের সঙ্গে ভারত কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচনের বৈধতা শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতারও বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান

যুক্তরাষ্ট্রও সংস্কার উদ্যোগের জোরালো সমর্থক। মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেছেন, ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনর্গঠনের পথ তৈরি করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে চলমান ঐকমত্য সৃষ্টির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে।

মার্কিন মনোনীত রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন “কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন”, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যত দিক নির্ধারণ করবে।

অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাংলাদেশে পূর্ণমাত্রার নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। ইইউ দূতাবাস জানিয়েছে, তারা সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, মানবাধিকার ও বিনিয়োগসহ নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

অন্যান্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গি

কানাডা অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যকমনওয়েলথ অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।
ফ্রান্স “সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচন”-এর আহ্বান জানিয়েছে,
জার্মানি বলেছে, বহুদলীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে,
আর অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করছে।

অন্যদিকে, চীন স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পর বর্তমান সরকার যে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন করছে, তা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ছাড়া টেকসই হবে না।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আহ্বান

জাতিসংঘের অনুসন্ধান ও ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা (যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, সিপিজে, সিভিকাস ইত্যাদি) আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে এবং অনেক ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে।

তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সরকার এসব মতামত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করলেও সবকিছু মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

কূটনৈতিক বিশ্লেষণ

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, পশ্চিমা দেশগুলো “জনগণের অংশগ্রহণ”কেই মূল সূচক হিসেবে দেখছে, যেখানে ভারত “অন্তর্ভুক্তিমূলক” বলতে হয়তো আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বোঝাচ্ছে। তার মতে, ভারত ছাড়া প্রায় সব দেশই এমন নির্বাচন গ্রহণ করবে, যা ভয়ভীতিমুক্ত, সুষ্ঠু এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়


নিউজটি আপডেট করেছেন : Abdur Rabby

কমেন্ট বক্স