বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি: আদানি চুক্তিসহ বেশিরভাগ চুক্তিতে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে গঠিত উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রমাণ পেয়েছে যে, আদানি সহ অধিকাংশ বিদ্যুৎ চুক্তিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। কমিটির তথ্যানুযায়ী, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক, আমলা এবং রাজনীতিবিদদের যোগসাজশে এই অনিয়ম ঘটেছে। এর ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুতের দাম প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি, ভর্তুকি বাদ দিলে যা ৪০ শতাংশে পৌঁছাবে।
গত ১৪ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন চার গুণ বেড়েছে, কিন্তু খরচ বেড়েছে ১১ গুণ। ২০১১ সালে বিদ্যুৎ কেনার জন্য ৬৩.৮ কোটি ডলার খরচ হয়েছিল, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৭৮০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
জাতীয় কমিটি, যার আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, গতকাল অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে হস্তান্তর করেছে। কমিটিতে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য আবদুল হাসিব চৌধুরী, কেপিএমজি বাংলাদেশের প্রাক্তন চিফ অপারেটিং অফিসার আলী আশরাফ, বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক মোশতাক হোসেন খান এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক।
সংবাদ সম্মেলনে ফাওজুল কবির জানান, আদানির চুক্তিতে অনিয়ম ধরা পড়লে চুক্তি বাতিল করতে কোনো দ্বিধা করা হবে না। তিনি বলেন, “প্রতিটি চুক্তিতে স্বীকারোক্তি থাকে যে, দুর্নীতি করা হয়নি। কিন্তু এটি ভঙ্গ হলে চুক্তি বাতিল করা সম্ভব।”
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, “বিগত সরকারের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনের আওতায় বড় ধরনের অনিয়ম এবং দুর্নীতি হয়েছে। ভারতের আদানি সহ যেসব কোম্পানি এতে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।”
অধ্যাপক মোশতাক হোসেন খান বলেন, “যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো সার্বভৌম চুক্তি। আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। তবে প্রক্রিয়ায় যেসব ব্যতিক্রম হয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ার মূল কারণও এই দুর্নীতি।”
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “২০১১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিদ্যুতের উৎপাদন চার গুণ বেড়েছে, কিন্তু অর্থ পরিশোধ বেড়েছে ১১.১ গুণ। বিদ্যুৎ কত পেলাম, কত দিচ্ছি, তার হিসাব মেলানো যাচ্ছে না, এটি আমাদের মূল উপাত্ত।”
আইনজীবী শাহদীন মালিক জানান, “চুক্তি বাতিল করার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক আদালতে কোম্পানিগুলো ৫ বিলিয়ন ডলার দাবি করতে পারে। তাই সতর্কতার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হবে।”
Abdur Rabby
