চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন চালিতাতলী এলাকায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী জনসংযোগ চলাকালে গুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে মোহাম্মদ সরওয়ার হোসেন বাবলা নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং এরশাদ উল্লাহসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে পূর্ব মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত বাবলা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। সম্প্রতি তিনি নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছিলেন। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় অন্তত ১৮টি মামলা রয়েছে। তবে বিএনপি দাবি করেছে, সরওয়ার তাদের দলের কেউ নন।
পুলিশ জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ নামের এক সন্ত্রাসীর সঙ্গে সরওয়ারের বিরোধ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সেই বিরোধের জেরেই সরওয়ারকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এ সময় প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ ও অন্যান্যরা গুলিবিদ্ধ হন।
ঘটনার ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, এরশাদ উল্লাহ প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, এমন সময় এক যুবক ভিড়ের মধ্যে ঢুকে খুব কাছ থেকে সরওয়ারের ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন। একের পর এক সাত-আটটি গুলি ছোঁড়া হয়।
গুলিবিদ্ধ এরশাদ উল্লাহকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর নগরজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে শুরু হওয়া মিছিল নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। নেতারা অভিযোগ করেন, “ধানের শীষের প্রার্থীর ওপর হামলা চালিয়েছে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী।”
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী ও জনসমর্থনহীন একটি রাজনৈতিক দলের মদদে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী এই বর্বর হামলা চালিয়েছে। তারা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, কিন্তু বিএনপি রাজপথে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।”
অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নিরাপত্তা বাহিনীকে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে এরশাদ উল্লাহ টার্গেট ছিলেন না; বিক্ষিপ্তভাবে ছোড়া গুলিই তাঁর শরীরে লাগে।
সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলকে সংযম ও শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, “নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দুষ্কৃতকারীরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা করছে।” তিনি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী হামলার দায় অস্বীকার করেছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে কেউ যেন রাজনৈতিক ফায়দা নিতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।”
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, “আমাদের প্রাথমিক ধারণা, সরওয়ার বাবলা ছিল টার্গেট। তারই প্রতিপক্ষরা এই হামলা চালিয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে এমন ঘটনা অবশ্যই অস্বস্তিকর, আমরা যাতে পুনরায় এমন না ঘটে সে বিষয়ে সচেতন আছি।”
Abdur Rabby
