বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা মতভেদ চলছে, তবে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের জন্য একটি সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করেছে। কয়েক মাসের মধ্যেই নির্বাচন হতে পারে। তবে, এই নির্বাচনে বিদেশে অবস্থানরত আমাদের ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি প্রবাসী ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কি? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশে কতজন নাগরিক প্রবাসে আছেন, তা নির্ভুলভাবে বলা কঠিন। বাংলাদেশে প্রবাসী নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য ভিন্ন ভিন্ন। ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর বণিক বার্তার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিবিএসের জনশুমারি অনুযায়ী প্রবাসীর সংখ্যা ৫০ লাখ ৫৩ হাজার, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ১ কোটি ২৫ লাখ, বিএমইটিএর তথ্যমতে ১ কোটি ৪৮ লাখ, এবং জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ১ কোটি ৫৫ লাখ বলে উল্লেখ করেছেন। কে সঠিক, তা নির্ধারণ করা কঠিন। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য অমানবিক পরিশ্রম করে, বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান, কিন্তু তাদের সঠিক সংখ্যা ও অবস্থা নিয়ে কোনো সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই।
ডেইলি স্টার বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবাসীরা ২০২৪ সালে ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। তবে, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা নানা ধরনের সমস্যা ও অভিযোগে ভুগছেন। প্রতিবছর হাজারো প্রবাসী কর্মজীবনে অসুস্থ হয়ে, অনাহারে কিংবা দুর্ঘটনায় নিহত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। অনেকের ভাগ্যে দেশের মাটিও জোটে না। তাঁরা মানবেতর পরিবেশে জীবন কাটান।
আমাদের রাজনৈতিক আলোচনায় প্রবাসীদের জন্য নানা প্রতিশ্রুতি শোনা যায়, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় বা বিশেষ কোনো দিবসে। কিন্তু বাস্তবতা কী? প্রবাসীরা কতটা সহযোগিতা পাচ্ছেন? আমরা কি তাঁদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিচ্ছি? আমরা কি কখনো তাঁদের সমস্যাগুলি গভীরভাবে শুনেছি? প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল আছে কি?
এখন, আমাদের ১ কোটি ৫০ লাখ প্রবাসী ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকলে, কি আমরা সত্যিকার অর্থে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে পারব? পৃথিবীর অনেক দেশে প্রবাসীরা বিদেশে থেকেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা প্রবাসে থেকেও ডাকযোগে (অ্যাবসেন্টি ব্যালট), ই-মেইল বা ফ্যাক্সের মাধ্যমে ভোট দিতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে, সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য অনলাইন ভোটিংয়ের সুবিধাও রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রবাসী নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, তাঁদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Abdur Rabby
